পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অবতার-পিরদের ব্যবসায় আমাদের মূখ সমর্থন অব্যাহত থাকছে। এখনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ঘাড়ে, সিন্দবাদের সেই বুড়ো দৈত্যের মতো, চেপে বসেছে আস্তিক্যবাদ। তাই কেবল ওই আস্তিকতার অবচেতন প্রভাবে উলঙ্গ রাজাদের আমরা শনাক্ত করতে পারছি না; যথেষ্ট ক্রোধে-ঘৃণায় উদ্বেল হতে পারছি না। ফলে ক্ষয়রোগের বীজাণু অবাধে বাড়ছে। একমাত্র যুক্তিনিষ্ঠ নাস্তিকতাই আমাদের প্রতিবাদী সত্তাকে লালন করতে পারে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসটুকু যোগাতে পারে। কেননা আস্তিক্যবাদ আমাদের ভীরুতা ও মানিয়ে চলা শেখায় শুধু; নিয়তিবাদের কাছে সমর্পিত হতে প্ররোচনা দেয়। অতএব নাস্তিকতার অন্তর্বর্তী উদ্দীপক ইতিবাচকতাই আমাদের আশ্রয়ভূমি হোক। বিমানবায়ন ও ফাপা আস্তিকতার অশুভ আঁতাত ধ্বংস করে কদম-কদম এগিয়ে যাক নতুন জীবনস্বপ্নের উদগাতা, নতুন মানবচৈতন্যের উদ্ভাসক নাস্তিকতার প্রত্যয়। একে কি বলব ‘শত শতাব্দীর মনীষার কাজ? হয়তো। তবু, এই কবি, জীবনানন্দ, লিখেছিলেন অমোঘ উচ্চারণে:

‘কোথাও দর্শন নেই, বেশি নেই, তবুও নিবিড় অন্তর্ভেদী
দৃষ্টিশক্তি রয়ে গেছে মানুষকে মানুষের কাছে
ভালো স্নিগ্ধ আন্তরিক হিত
মানুষের মতো এনে দাঁড় করাবার’

সন্দেহ নেই যে, রিক্ত ‘হ্যাঁ’ থেকে ‘না’-এর সৃজনী উত্তাপে উত্তরণ দুরূহ এবং তা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। তবে মানবিক পূর্ণতার জন্যে গণমনে তারই উদ্যোগ চলেছে, চলতে থাকবে।

১৩৮