পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ృ ఫి সমাজ ( * ) চিরঞ্জীবেষু— ভায়, তোমার চিঠিতে কিঞ্চিৎ উষ্ম প্রকাশ পাইতেছে। তাহাতে আমি দুঃখিত নই ৷ তোমাদের রক্তের তেজ আছে ; মাঝে মাঝে তোমরা যে গরম হইয়া উঠ, ইহা দেখিয়া আমাদের আনন্দ বোধ হয় । আমাদের মত শীতল রক্ত যদি তোমাদের হইত তাহা হইলে পৃথিবীর কাজ চলিত কি করিয়া ? তাহা হইলে ভূমণ্ডলের সর্বত্র মেরুপ্রদেশে পরিণত হইত। অনেক বুড়ো আছে বটে, তাহারা পৃথিবী হইতে যৌবন লোপ করিতে চায়, তাহদের নিজ হৃদয়ের শৈত্য সৰ্ব্বত্র সমভাবে ব্যাপ্ত হয় এই তাহদের ইচ্ছা । যেখানে একটু মাত্র তাত পাওয়া যায়, সেইখানেই তাহারা অত্যন্ত ঠাণ্ড ফু দিয়া সমস্ত জুড়াইয়া হিম করিয়া দিতে চাহে। অর্থাৎ পৃথিবী হইতে কাচা চুল আগাগোড়া উৎপাটন করিয়া তাহার পরিবর্তে তাহারা পাকা চুল বুনানি করিতে চায়। তাহারা যে এককালে যুবা ছিল তাহ সম্পূর্ণ বিস্তৃত হইয়া যায়, এই জন্য যৌবন তাহাদের নিকটে একেবারে দুৰ্ব্বোধ হইয় পড়ে। যৌবনের গান শুনিয়া তাহার কাণে আঙুল দেয়, যৌবনের কাজ দেখিয় তাহারা মনে করে পৃথিবীতে কলিযুগের প্রাচুর্ভাব হইয়াছে। শুামল কিশলয়ের অসম্পূর্ণতা দেখিয়া ধূলাশায়ী জীৰ্ণ পত্র যেমন অত্যন্ত শুষ্ক পীত হাস্ত হাসিতে থাকে, অপরিণত যৌবনের সরস গুমিলত দেখিয়া অনেক বৃদ্ধ তেমনি করিয়া হাসিয়া থাকে। এই জন্তই ছেলে বুড়োর মাঝখানে এত দৃঢ় ব্যবধান পড়িয়া গিয়াছে। আমার কি ভাই সাধ যে, কেবল কতকগুলো উপদেশের ধোঁয়া দিয়া তোমাদের কাচা মাথা একদিনে পাকাইয়া তুলি! কাজ করিতে যদি পারিতাম তা হক্টলে কি আর সমালোচনা করিতে বসিতাম !