পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমাজ

অমোঘতা আর থাকে না—তবে স্পষ্ট মানিতে হয়, শাস্ত্রশাসন সকল কালে সকল স্থানে খাটে না।

 তাহা যদি না খাটিল, তবে আমাদের কর্ত্তব্যের নিয়ামক কে? শুভবুদ্ধিও নহে, শাস্ত্রবাক্যও নহে। লোকাচার। কিন্তু লোকাচারকে কে পথ দেখাইবে? লোকাচার যে অভ্রান্ত নহে, ইতিহাসে তাহার শতসহস্র প্রমাণ আছে। লোকাচার যদি অভ্রান্ত হইত, তবে পৃথিবীতে এত বিপ্লব ঘটিত না, এত সংস্কারকের অভ্যুদয় হইত না।

 বিশেষত যে লোকসমাজের মধ্যে জীবনপ্রবাহ নাই সেখানকার জড় লোকাচার আপনাকে আপনি সংশোধন করিতে পারে না। স্রোতের জল অবিশ্রাম গতিবেগে নিজের দূষিত অংশ ক্রমাগত পরিহার করিতে থাকে। কিন্তু বদ্ধ জলে দোষ প্রবেশ করিলে তাহা সংশোধিত হইতে পারে না, উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতে থাকে।

 আমাদের সমাজ বদ্ধ সমাজ। একে ত আভ্যন্তরিক সহস্র আইনে বদ্ধ, তাহার পরে আবার ইংরাজের আইনেও বাহির হইতে অষ্টেপৃষ্ঠে বন্ধন পড়িয়া গেছে। সমাজ-সংশোধনে স্বদেশীয় রাজার স্বাভাবিক অধিকার ছিল এবং পূর্ব্বকালে তাঁহারা সে-কাজ করিতেন। কিন্তু অনধিকারী ইংরাজ আমাদের সমাজকে যে অবস্থায় হাতে পাইয়াছে ঠিক সেই অবস্থায় দৃঢ়ভাবে বাঁধিয়া রাখিয়াছে। সে নিজেও কোনো নূতন নিয়ম প্রচলিত করিতে সাহস করে না, বাহির হইতেও কোনো নূতন নিয়মকে প্রবেশ করিতে দেয় না। কোনটা বৈধ, কোন্‌টা অবৈধ তাহা সে অন্ধভাবে নির্দ্দিষ্ট করিয়া দিয়াছে। এখন সমাজের কোনো সচেতন স্বাভাবিক শক্তি সহজে কোনোরূপ পরিবর্ত্তন সাধন করিতে পারে না।

 এমন বাঁধা-সমাজের মধ্যে যদি লোকাচার মানিতে হয়, তবে একটা মৃত দেবতার পূজা করিতে হয়। সে কেবল একটা নিশ্চল