পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নকলের নাকাল
২৭

বঞ্চিত হইবে কেন? তোমার যদি মত হয় যে, আমাদেব স্বদেশীয় সজ্জা ত্যাজ্য এবং বিদেশী পোষাকই গ্রাহ্য, তবে দলপুষ্টিতে আপত্তি করিলে চলিবে না।

 তুমি বলিবে, বিলাতী সাজ পরিতে চাও পর, কিন্তু কোনটা ভদ্র কোনটা অভদ্র, কোনটা সঙ্গত কোনটা অদ্ভুত, সে খববটা লও!

 কিন্তু সে কখনই সম্ভব হইতে পারে না যাহারা ইবাজী সমাজে নাই, যাহাদের আত্মীসস্বজন বাঙালী—তাহারা ইশ্বাজিদস্তুবের আদর্শ কোথায় পাইবে?

 যাহাদের টাকা আছে, তাহারা ব্যাঙ্কিনহাম্মাণের হস্তে চক্ষু বুজিয়া আত্মসমর্পণ করে, এবং বড় বড় চেকে সই কবিয়া দেয়— মনে মনে সান্ত্বনা লাভ করে, নিশ্চয়ই আর কিছু না হউক, মামাকে দেখিয়া অন্তত ভদ্র ফিরিঙ্গি বলিযা লোকে আন্দাজ করিবে—ইংরাজিকায়দা জানে না এমন মৃর্চ্ছাকব অপবাদ কেহ দিতে পারিবে না।

 কিন্তু পনেবো-আনা বাঙালিরই অর্থাভাব——এবং চাঁদনিই তাহাদের বাঙালী সজ্জার চরম মোক্ষস্থান। অতএব উণ্টা-পাল্টা ভুলচুক হইতেই হইবে। এমন স্থলে পবের সাজ পরিতে গেলে, অধিকাংশ লোকেরই সং-সাজা বই গতি নাই।

 দুই চারিটা কাক অবস্থাবিশেষে ময়ুবের পুচ্ছ মানান-সই করিয়া পরিতেও পারে—কিন্তু বাকি কাকেরা তাহা কোনোমতেই পারিবে না— কারণ, ময়ুবসমাজে তাহাদেব গতিবিধি নাই—এমন অবস্থায় সমস্ত কাকসম্প্রদায়কে বিদ্রূপ হইতে বক্ষা করিবার জন্য উক্ত কয়েকটি ছদ্মবেশীকে ময়ূবপুচ্ছেব লোভ সম্বরণ করিতেই হইবে। না যদি করেন, তবে পবপুচ্ছ বিকৃতভাবে আস্ফালনের প্রহসন সর্ব্বত্রই ব্যাপ্ত হইয়া পড়িবে।

 এই লজ্জা হইতে, ইংরাজিয়ানার এই বিকার হইতে স্বদেশকে রক্ষা করিবার জন্য আমরা কি সক্ষম নকলকারীকে সানুনয়ে অনুরোধ