পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
সমাজ

 এই জন্য বৈষয়িক এবং আধ্যাত্মিক উভয় হিসাবেই অহঙ্কারের এত নিন্দা।

 কিন্তু অযথা ভক্তিও যে অহঙ্কারের মত সর্ব্বতোভাবে দুষ্য নীতি শাস্ত্রে সে কথার উল্লেখ থাকা উচিত। অন্ধ ভক্তিও পরের সম্বন্ধে আমাদের অজ্ঞতার কারণ হয়। এবং অযোগ্য ভক্তিতে আমাদিগকে যদি আপনার সমকক্ষ অথবা আপনার অপেক্ষা হীনের নিকট নত করে তবে তাহাতে যে দীনতা উপস্থিত করে তাহা অহঙ্কাবের সঙ্কীর্ণতা অপেক্ষা অল্প হেয় নহে এই জন্য ইংরাজ সমাজে অভিমানকে অহঙ্কারের মত নিন্দনীয় বলে না। অভিমান না থাকিলে মনুষ্যত্বের হানি হয় একথা তাহারা স্বীকার করে।

 যাহার মনুষ্যত্বের অভিমান আছে সে কখনই অযোগ্য স্থানে আপনাকে নত করিতে পারে না। তাহার ভক্তির বৃত্তি যদি চরিতার্থতা চায় তবে সে যেখানে সেখানে লুটাইয়া পড়ে না,—সে যথোচিত সন্ধান ও প্রমাণের ধারা যথার্থ ভক্তিভাজনকে বাহির করে।

 কিন্তু আমরা ভক্তিপ্রবণ জাতি। ভক্তি করাকেই আমরা ধর্ম্মাচরণ বলিয়া থাকি;—কাহাকে ভক্তি করি তাহা বিচার করা আমাদেব পক্ষে বাহুল্য।

 আমাদের সৎপ্রবৃত্তিরও পথ যদি অত্যন্ত অবাধ হয় তাহাতে ভাল ফল হয় না। তাহার বল, তাহার সচেষ্টতা, তাহার আধ্যাত্মিক উজ্জ্বলতা রক্ষার জন্য, তাহাকে অমোঘ হইবার জন্য বাধার সহিত তাহার সংগ্রাম আবশ্যক।

 যেমন বৈজ্ঞানিক সত্য নির্ণয় করিতে হইলে তাহাকে পদে পদে সংশয়ের দ্বারা বাধা দিতে হয়, আপাতদৃষ্টিতে বিশ্ব সাধারণের কাছে যাহা অসন্দিগ্ধ সত্য বলিয়া খ্যাত তাহাকেও কঠিন প্রমাণের দ্বারা বারম্বার বিচিত্রভাবে পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হয়। যে লোক অতি-