পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ و& by মাত্র ব্যক্তিবিশেষের প্রতি প্রীতি বা ভক্তি নয়, তাহ ব্যক্তিবিশেষকে অতিক্রম করিয়া বৰ্ত্তমান, তাহা স্বামী নামক ভারগত অস্তিত্বের প্রতি ভক্তি। ব্যক্তিবিশেষ উপলক্ষ্য মাত্র, স্বামীই প্রধান লক্ষ্য । এই জন্ত ব্যক্তির ভাল মন্দের উপর ভক্তির তারতম্য হইত না । সকল স্ত্রীর সকল স্বামীই সমান পূজ্য। যুরোপীয় স্ত্রীর ভক্তি প্রতি ব্যক্তির মধ্যেই বদ্ধ, ভাবে গিয়া পৌছায় না। এই জন্ত স্বামী নামক ব্যক্তিবিশেষের দোষ গুণ অনুসারে তাহার ভক্তি প্রীতি নিয়মিত হয় । এই জন্তই সেখানে বিধবাবিবাহে দোষ নাই, কারণ সেখানকার স্ত্রীরা ভাবকে বিবাহ করে না, ব্যক্তিকেই বিবাহ করে, সুতরাং ব্যক্তিত্বের অবসানেই স্বামীত্বের অবসান হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যক্তিগত সম্পর্কই এইরূপ সুগভীর ভাবের উপরে স্থায়ী । কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেন, অন্তান্ত বিষয় দেখ না। আমাদের ব্রাহ্মণের কি সমাজের হিতার্থ সমাজ ত্যাগ করেন নাই ? রাজার কি ধৰ্ম্মের জন্ত বৃদ্ধ বয়সে রাজ্য ত্যাগ করেন নাই ? ( যুরোপের রাজার তাড়া না খাইলে কখনো এমন কাজ করেন ? ) ঋষিরা কি জ্ঞানের জন্ত অমরতার জন্ত সংসারের সমস্ত সুগ ত্যাগ করেন নাই ? পিতৃসত্য পালনের জন্ত রামচন্দ্র যৌবরাজ্য ত্যাগ, সত্যরক্ষার জন্ত হরিশ্চন্দ্র স্বৰ্গত্যাগ, পরহিতের জন্ত দধীচি দেহত্যাগ কবেন নাই ? কৰ্ত্তব্য অর্থাৎ ভাবমাত্রের জন্ত আত্মত্যাগ আমাদের দেশে ছিল না কে বলে ? কুকুর যেরূপ অন্ধ আসক্তিতে মনিবের পশ্চাৎ পশ্চাৎ যায়, সীতা কি সেইভাবে রামের সঙ্গে সঙ্গে বনে গিয়াছিলেন, না মহৎ ভাবের পশ্চাতে মনুষ্য যেরূপ অকাতরে বিপদ ও মৃত্যুর মুখে ছুটিয়া যায় সীত সেইরূপ ভাবে গিয়াছিলেন ? তবে কি ব্যক্তির প্রতি ও ভাবের প্রতি ভক্তি একই সময়ে থাকিতে পারে না ? বৰ্ত্তমানের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস স্থাপন করিয়া পারে