পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সমালোচনা

জন্মশিখর হইতে আরম্ভ করিয়া সাগরসঙ্গম পর্যন্ত যদি যোগ থাকে তবে তাহার কত বল! তবে তাহা পাষাণের বাধা মানিবে না, কথায় কথায় রৌদ্রতাপে শুকাইয়া বাষ্প হইয়া যাইবে না। আমি কিছু পরগাছা নহি, গাছ হইতে গাছে ঝুলিয়া বেড়াই না। বাহিরের রৌদ্র, বাহিরের বাতাস, বাহিরের বৃষ্টি আমি ভোগ করিতেছি, কিন্তু মাটির ভিতরে ভিতরে প্রসারিত আমার অতীতের উপর আমি দাঁঁড়াইয়া আছি। আমার অতীতের মধ্যে আমার কতকগুলি তীর্থস্থান প্রতিষ্ঠিত আছে, যখন বর্ত্তমানে পাপে তাপে শোকে কাতর হইয়া পড়ি তখন সেই তীর্থস্থানে গমন করি, সরল বাল্যকালের সমীরণ ভোগ করি, নবজীবনের প্রথম সঙ্কল, মহৎ উদ্দেশ্য, তক্ষণ আশা সকল পুনরায় দেখিতে পাই। আমার এ অতীতের পথ যদি মুছিয়া যাইত, তাহা হইলে আজ আমি কি হইতাম একটি জরাজীর্ণ কঠোরহৃদয়, অবিশ্বাসা বিদ্রপপরায়ণ বৃদ্ধ হইয়া উদাসনেত্রে সংসারের দিকে চাহিয়া থাকিতাম।
 এই জন্যই আমি এই সকল অতিশয় তুচ্ছ দ্রব্যগুলিকে, অতীতকালের অতি সামান্য চিহ্নটুকুকেও যত্ন করিয়া রাখিয়াছি; অত্যধিক জ্ঞান লাভ করিয়া, কুসংস্কারের অত্যন্ত অভাবে সে গুলিকে অনাবশ্যক বোধে ফেলিয়া দিই নাই।