পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
সমালোচনা।

যে মকড়ষার জালে মাছির ন্যায় বাস করিতেছি, এখানে মতামত-নামক আস্‌মানগামী ডানা দুটো খোলসা আছে বটে কিন্তু ছটা পা জড়াইয়া গেছে। ডানা আস্ফালন যথেষ্ট হইতেছে কিন্তু উড়িবার কোন সুবিধা হইতেছে না। এখানে ডানা-দুটো কেবল কষ্টেরই কারণ হইয়াছে।

 যেটা ভাল বলিয়া জানিলাম সেটা ভাল রকম হইয়া উঠে না– জ্ঞানের উপর বিশ্বাস হ্রাস হইয়া যায়। যে উদ্দেশ্যে যে কাজ আরম্ভ করিলাম পদে পদে তাহার উল্টা উৎপত্তি হইতে লাগিল, সে কাজে আর গা লাগে না।

 আমাদের সমাজ যে উত্তরোত্তর জটিল সমস্যা হইয়া উঠিতেছে, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই। কেহ বলিতেছে বিধবাবিবাহ ভাল, কেহ বলিতেছে মন্দ; কেহ বলিতেছে বাল্যবিবাহ উচিত, কেহ বলিতেছে অনুচিত; কেহ বলে পরিবারের একান্নবর্ত্তিতা উঠিয়া গেলে দেশের মঙ্গল, কেহ বলে অমঙ্গল। আসল কথা, ভাল কি মন্দ কোনটাই বলা যায় না– কোথাও বা ভাল কোথাও বা মন্দ।

 বর্তমান বঙ্গসমাজ যে এতটা ঘোলাইয়া গিয়াছে তাহার গুরুতর কারণ আছে। প্রাচীন কালে স্ত্রী পুরুষ বা সমাজের উচ্চনীচ শ্রেণীর মধ্যে শিক্ষার ন্যূনাধিক্য ছিল বটে, কিন্তু শিক্ষার সাম্যও ছিল। সকলেরই বিশ্বাস, লক্ষ্য, আকাঙ্ক্ষা, রুচি ও ভাব এক প্রকারের ছিল। সমাজসমুদ্রের মধ্যে তরঙ্গের উঁচু-নীচু অবশ্যই ছিল, কিন্তু তেলে জলের মত একটা পদার্থ ছিল না। পরস্পরের মধ্যে যে বিভিন্নতা ছিল তাহার ভিতরেও জাতীয়ভাবের একটি ঐক্য ছিল, সুতরাং এরূপ সমাজে