পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমালোচনা।
১৫২

চিরন্তন প্রথার নীরস আদেশ তাহারা মান্য করিবে? তাহা ব্যতীতও বাল্যবিবাহের আর একটি অর্থ আছে। বালককাল হইতে দম্পতির একত্রে বর্দ্ধন, একত্রে অবস্থান হইলে, উভয়ে এক রকম মিশ খাইয়া যায়, বনিয়া যায়। কিন্তু যখন পাত্র ও পাত্রী উভয়ে বয়স্ক, উভয়েরই যখন চরিত্র সংগঠিত ও মতামত স্থিরীকৃত হইয়া গিয়াছে ও কচি-অবস্থার নমনীয়তা চলিয়া গিয়াছে ও পাকা-অবস্থার দৃঢ়তা জন্মিয়াছে, তখন অমন দুই ব্যক্তিকে অনুরাগ ব্যতীত আর কিছুতেই জুড়িতে পারে না– না বাসসামীপ্য, না বিবাহের মন্ত্র। তাহাদের যতই বলপূর্ব্বক একত্র করিতে চেষ্টা করিবে, ততই তাহারা দ্বিগুণ বলে তফাৎ হইতে থাকিবে। অনুরাগ করা তাহাদের পক্ষে কর্ত্তব্য কার্য্য বলিয়াই অনুরাগ করা তাহাদের পক্ষে দ্বিগুণ দুঃসাধ্য হইয়া পড়িবে। অতএব যদি অসবর্ণ বিবাহ না দেও তবে পূর্ব্বরাগমূলক বিবাহ দিও না, বাল্যবিবাহ প্রচলিত থাক্‌, অবরোধপ্রথা উঠাইও না। তুমি যে মনে করিতেছ, সুবিধামত আমি সমাজ হইতে লোকাচারের একটি মাত্র ইঁট খসাইয়া লইব, আর অধিক নয়, তোমার কি ভ্রম! ঐ একটি ইঁট খসিলে কতগুলি ইঁট খসিবে ও প্রাচীরে কতখানি ছিদ্র হইবে তাহা তুমি জান না।

 অতএব দেখা যাইতেছে, দুই দল লোক সমাজসংস্কার করে। এক– যাহারা লোকাচারকে একেবারে মূল হইতে উৎপাটন করে, আর– যাহা লোকাচারের একটি একটি করিয়া শিকড় কাটিয়া দেয় ও অবশেষে কপালে করাঘাত করিয়া বলে, “এ কি হইল। গাছ শুকাইল