পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এক-চোখো সংস্কার।
১৫৩

কেন?” ইহাদের উভয়েরই আবশ্যক। প্রথম দল যখন কোন একটা লোকাচার আমূলতঃ বিনাশ করিতে চায়, তখন সমাজ কোমর বাঁধিয়া রুখিয়া দাঁড়ায়। কিন্তু তাহাই বলিয়া যে সংস্কারকদের সমস্ত প্রয়াস বিফল হয় তাহা নহে। তাহার একটা ফল থাকিয়া যায়। মনে কর যেখানে অবরোধপ্রথা একাবারে তুচ্ছ করিয়া পাঁচ জন সংস্কারক তাঁহাদের পত্নীদিগকে গাড়ি চড়াইয়া রাস্তা দিয়া লইয়া যান, সেখানে দশ জন স্ত্রীলোক পাল্কী চড়িয়া যাইবার সময় দরজা খুলিয়া রাখিলেও তাঁহাদের কেহ নিন্দা করে না। কেবল মাত্র যে তাঁহাদের নিন্দা করে না, তাহা নহে; তাঁহাদের লক্ষ্য করিয়া সকলে বলাবলি করে, “হাঁ, এ ত বেশ! ইহাতে ত আমাদের কোন আপত্তি নাই! কিন্তু মেয়ে মানুষে গাড়ি চড়িবে সে কি ভয়ানক!” আপত্তি যে নাই, তাহার কারণ, আর পাঁচ জন গাড়ি চড়ে। নহিলে বিষম আপত্তি হইত। সমাজ যখন দেখে দশ জন লোক হোটেলে গিয়া খানা খাইতেছে, তখন যে বিশ জন লোক ব্রাক্ষ্মণকে দিয়া মুরগী রাঁধাইয়া খায়, তাহাদিগকে দ্বিগুণ আদরে বুকে তুলিয়া লয়। ইহাই দেখিয়া অদূরদর্শীগণ আমূল-সংস্কারকদিগকে বলিয়া থাকে, “দেখ দেখি, তোমরাও যদি এইরূপ অল্পে অল্পে আরম্ভ করিতে, সমাজ তোমাদেরও কোন নিন্দা করিত না।”

 এক কালে যে লোকাচারের প্রাচীরটি আশ্রয়স্বরূপ ছিল, আর এক কালে তাহাই কারাগার হইয়া দাঁড়ায়। এক দল কামান লইয়া বলে, ভাঙিয়া ফেলিব; আর-এক দল রাজমিস্ত্রির যন্ত্রাদি আনিয়া বলে, না, ভাঙিয়া কাজ নাই, গোটাকতক খিড়্‌কির দরজা তৈরি করা যাক।