পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একটি পুরাতন কথা
১৬৫

লইয়া কথা হইতেছে; আপাততঃ অস্থায়ী সুখই আমার আবশ্যক বলিয়া বোধ হইতেছে। তাহা ছাড়া পরের অহিত করিয়া আমি যে সুখ কিনিয়াছি তাহাই যে স্থায়ী নহে তাহার প্রমাণ কি? প্রবঞ্চনা করিয়া যে টাকা পাইলাম তাহা যদি আমরণ ভোগ করিতে পাই, তাহা হইলেই আমার সুখ স্থায়ী হইল।” ইত্যাদি ইত্যাদি।

 এইখানেই যে তর্ক শেষ হয়, তাহা নয়, এই তর্কের সোপান বাহিয়া উত্তরোত্তর গভীর হইতে গভীরতর গহ্বরে নামিতে পারা যায়— কোথাও আর তল পাওয়া যায় না, অন্ধকার ক্রমশঃই ঘনাইতে থাকে; তরণীর আশ্রয়কে হেয়জ্ঞানপূর্ব্বক প্রবল গর্ব্বে আপনাকেই আপনার আশ্রয় জ্ঞান করিয়া অগাধ জলে ডুবিতে সুরু করিলে যে দশা হয় আত্মার সেই দশা উপস্থিত হয়।

 আর, লোকহিত তুমিই বা কী জান, আমিই বা কী জানি! লোকের শেষ কোথায়? লোক বলিতে বর্ত্তমানের বিপুল লোক ও ভবিষ্যতের অগণ্য লোক বুঝায়। এত লোকের হিত কখনোই মিথ্যার দ্বারা হইতে পারে না। কারণ, মিথ্যা সীমাবদ্ধ, এত লোককে আশ্রয় সে কখনোই দিতে পারে না। বরং, মিথ্যা একজনের কাজে ও কিছুক্ষণের কাজে লাগিতে পারে, কিন্তু সকলের কাজে ও সকল সময়ের কাজে লাগিতে পারে না। লোকহিতের কথা যদি উঠে তো আমরা এই পর্যন্ত বলিতে পারি যে, সত্যের দ্বারাই লোকহিত হয়— কারণ, লোক যেমন অগণ্য, সত্য তেমনি অসীম।

 যেখানে দুর্ব্বলতা সেইখানেই মিথ্যা প্রবঞ্চনা, কপটতা, অথবা যেখানে মিথ্যা প্রবঞ্চনা কপটতা সেইখানেই দুর্ব্বলতা। তাহার