পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

আলোচনা করিলেন। এইখানেই সমস্ত ফুরাইল। প্রথম সম্ভাষণ শেষ হইল। এই সম্ভাষণে কবি একটি মর্ত্ত্যের মনুষ্যকে সম্ভাষণ করিয়াছেন। যতক্ষণ সে মনুষ্য ততক্ষণ সে তাঁহার। তাঁহাকে সমর্পণ করিবার জন্যই অতীত ইহাকে গড়িয়াছে। গঠিত অবস্থায় দেখিলেন সে তাঁহারই মত। ইহাতে কেবল শরীর ও জীবনের কথাই আছে। “তুমি বাঁচিয়া থাক, তুমি কাজ কর, তোমার জীবন পূর্ণতা প্রাপ্ত হউক, ও অবশেষে যথাসময়ে অতি ধীরক্রমে তাহার অবসান হউক।” ইহাই কবির সমস্ত সম্ভাষণের মর্ম্ম। কবি তাঁহার সন্তানের মর্ত্ত্য অংশকে সম্ভাষণ করিতেছেন, সুতরাং উপরি-উক্ত আশীর্ব্বচন মর্ত্ত্য জীবনের প্রতি সর্ব্বতোভাবে প্রয়োগ করা যাইতে পারে। যাহা হউক, এইখানেই সমস্ত শেষ হইয়া যায় – জীবন আরম্ভ হইল, জীবন শেষও হইল। তখন জীবনের সমাধিস্তম্ভের উপর কবি দাঁড়াইয়া দূর দূরান্তরে দৃষ্টি চালনা করিলেন; দেখিলেন জীবন শেষ হইল, তাঁহার সন্তান শেষ হইল, কিন্তু যে সূত্র বাহিয়া এই সন্তান আসিয়াছে সেই সূত্রের শেষ হইল না। তিনি এখন দেখিলেন অনন্ত পথের একজন পথিক, পথের মধ্যে অবস্থিত তাঁহার গৃহে, পৃথিবীতলে অতিথি হইয়াছে। এই আতিথ্যজীবনকে সন্তান বলে, মনুষ্য বলে। আতিথ্যজীবন ফুরায়, সন্তানও ফুরায়, মনুষ্যও ফুরায়, কিন্তু পথিক ফুরায় না। প্রথমে তিনি সেই অতিথিকে সম্ভাষণ করিলেন, এখন সেই মহাপান্থকে সম্ভাষণ করিতেছেন। এখন পৃথিবীর অতিথিকে নহে, মহাকালের অতিথিকে সম্ভাষণ করিলেন। এখন তিনি দেখিতেছেন যে, এই পথিক সৌর জগতেরও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা।