পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি।
৯৫

করিবার কবি। চণ্ডিদাস সুখের মধ্যে দুঃখ ও দুঃখের মধ্যে সুখ দেখিতে পাইয়াছেন। তাঁহার সুখের মধ্যেও ভয় এবং দুঃখের প্রতিও অনুরাগ। বিদ্যাপতি কেবল জানেন যে মিলনে সুখ ও বিরহে দুঃখ, কিন্তু চণ্ডিদাসের হৃদয় আরো গভীর, তিনি উহা অপেক্ষা আরো অধিক জানেন! তাঁহার প্রেম “কিছু কিছু সুধা, বিষগুণা আধা,” তাঁহার কাছে শ্যাম যে মুরলী বাজান, তাহাও “বিষামৃতে একত্র করিয়া।”

কহে চণ্ডিদাস, ‘শুন বিনোদিনী,
সুখ দুখ দুটি ভাই?
সুখের লাগিয়া যে করে পিরীতি,
দুখ যায় তার ঠাঁই।'

চণ্ডিদাস শতবার করিয়া বলিয়াছেন,

“যার যত জ্বালা তার ততই পিরীতি।”

 “সদা জ্বালা যার, তবে সে তাহার মিলয়ে পিরীতিধন।” “অধিক জ্বালা যায় তার অধিক পিরীতি।” ইত্যাদি। কিন্তু সেই চণ্ডিদাস আবার কহিয়াছেন,

“সই, পিরীতি না জানে যারা,
এ তিন ভুবনে জনমে জনমে
কি সুখ জানয়ে তারা?”

পিরীতি-নামক যে জ্বালা, পিরীতি-নামক যে দুঃখ, এ দুঃখ যাহারা না জানিয়াছে, তাহারা পৃথিবীতে কি সুখ পাইয়াছে? যখন রাধা কহিলেন,

“বিধি যদি শুনিত, মরণ হইত,
      ঘুচিত সকল দুখ।”