পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ মেয়েকে সঙ্গে করিয়া অতদূর মফঃস্বলের ছোট সহরে যাওয়ার ইচ্ছা! নীলার মা’র ছিল না । তিনি বলিলেন, “আর কাটা মাস থেকে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে গেলে হ’তনা দাদা ? একটা ছোটখাট বাড়ী ঠিক করে” নিয়ে-” নীলার মেজমামা বলিলেন, “মাথা খারাপ নাকি তোর ? অরক্ষণীয়া নাকি মেয়ে তোর ? বাপ মরেছে, একটা বছর কাটুক না।” “ও !’ বলিয়া নীলার মা চুপ করিয়া গেলেন। কেবল তাই নয়, সহরে তাদের দেখাশোনা করিবে কে, খরচ” চালাইবে কে ? মামারা তে রাজা নন। সুতরাং সকলে মামাবাড়ী গেল। সকালে গাড়ীতে উঠিয়া অনেক রাত্ৰি পৰ্য্যন্ত হু হু করিয়া চলিলে যেখানে পৌছানো যায়। স্থানটির পরিবর্তন হয় নাই, অনেক কালের ভাঙা ঘাট ওয়াল পানভিরা পুকুরটার দক্ষিণে ছোট। আমবাগানটির কাছে নীলার দুই মামার বাড়ীটিরও পরিবর্তন হয় নাই । কেবল মামার, মামীর, আর মামাতো ভাইবোনেরা এবার যেন কেমন বদলাইয়া গিয়াছে! কোথায় সেই মামাবাড়ীর আদর, সকলের আনন্দগদগদ ভাব, অফুরন্ত উৎসব ? এবার তো একবারও কেউ বলিল না, এটা খা-ওটা খাঁ ? তার বাবার জন্য কঁদোকাটা শেষ করিয়া ফেলিবার পরেও তো বলিল না ? একটু কঁাদিবে নাকি নীলা, বাবার জন্য মাঝে মাঝে যেটুকু কঁাদে তারও উপরে মামাবাড়ীর অনাদর অবহেলার জন্য একটু বেশী রকম কান্না ? কিছুকাল কাটিবার পর এ বিষয়ে ভাবিয়া কিছু ঠিক করিবার প্রয়োজনটা মিটিয়া গেল, আপনা হইতেই যথেষ্ট কঁাদিতে হইল নীলাকে । ছেড়া ময়লা কাপড় তো নীলা জীবনে কখনো পরে নাই, গোবর দিয়া ঘর লেপে নাই, পানাপুকুরে বাসন মাজে নাই, কলসী কঁাথে জল আনে (2