পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ মধ্যে যাতনা ভোগ করিতে না থাকিলে তার গল্প শুনিয়া কেউ এ দৃশ্য কল্পনা করার চেষ্টাও করিত না, হাসিতও না । কে জানে, সংসারের পীড়নের হাত এড়ানোর জন্যই হয়তো সকলে প্ৰতি সন্ধ্যায়। এখানে গল্প করিতে আর হাসিতে আসে । রসময় গম্ভীর মুখে বসিয়া থাকে। সকলের হাসির শব্দের মধ্যেও সে শুনিতে পায়, ঠিক পিছনে ঘড়িটা টিক টিক করিতেছে। একটা খাপছাড়া শব্দ শুনিয়া চাহিয়া দেখিতে পায়, রতন কঁাদ কঁাদ মুখে মাথার পিছনে হাত বুলাইতেছে। ব্যাপারটা সে অনুমান করিতে পারে। টুলে বসিয়া ঘুমে ঢুলিতে ঢুলিতে রতন পড়িয়া যাওয়ার উপক্রম করিয়াছিল, চমক দেওয়া জাগরণের আতঙ্কে সবেগে সোজা হইতে গিয়া পার্টিশনে মাথাটা ঠুকিয়া গিয়াছে। রসময়ের দৃষ্টিপাতে রতন অপরাধীর মত একটু হাসিল। একটু দূরে আরেকটা ডাক আসিয়াছিল। রোগী দেখিয়া ফিরিয়া রাত্রি এগারোটার পর শুইতে যাওয়ার সময় রসময়ের মনে হইতে লাগিল, দুঃখময় হাসির জগতে সে বাস করে, কিন্তু জগতের কোন হাস্যকর ব্যাপারের সঙ্গে তার যোগ নাই। হয়তো একদিন যোগ ছিল, অল্প বয়সে যখন প্ৰাণ খোলা হাসি হাসিবার জন্য বাহিরের কোন উপলক্ষ দরকার হইত না, নিজের ভিতরের প্রেরণায় হাসিতে হাসিতে অনায়াসে নিজেই নিজের দম আটকাইয়া আনিতে পারিত। সেদিন অনেককাল চলিয়া গিয়াছে। কতকাল সে যে পাগলের মত হাসে নাই। কেন হাসে নাই ? বড় কোন দুঃখ পায় নাই বলিয়া ? দুঃখের লাঙ্গলে মন চাষা না হইলে হাসির ফসল ফলিবে না, এতো উচিত কথা নয়। তার জীবনে যে জমকালো শোকদুঃখ আসে নাই, তাই বা কে বলিল। যদি তাই হয় যে তার জীবনের শোকদুঃখগুলি অন্যের SV8