পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ যাদবের শ্বশুরবাড়ীর গ্রামের কাছেই সোদপুর গ্রাম। শরীর মন যেন যাদবের হাল্কা হইয়া যায় । নিশ্চিন্ত মনে সে সঙ্গে সঙ্গে হাটতে আরম্ভ করে। যাদব যে তার দিকেই আগাইয়া চলিতেছিল। হঠাৎ দিক পরিবর্তন করিয়াছে এটা আগন্তুকের কাছে ধরা পড়ে নাই, গতিবেগ খানিকটা কমাইয়া সে বলে, “একটু আস্তে হাট, নয়ত আপনার কষ্ট হবে ।” যাদব সবিনয়ে বলে, “আক্তে না, কষ্ট কিসের ?” “পিছন থেকে এসে ধরে ফেললাম, একটু আস্তে হাঁটেন বৈকি। আপনি ৷” কথা আর গলার সুরা শুনিয়া মনে হয়, অপরিচয়ের ব্যবধানটা পুরাপুরিই আছে বটে। তবু যেন তারা পরস্পরের আপনি জন, পরমাত্মীয়। তাই স্বাভাবিক, মানুষ যখন মানুষকে শুধু মানুষ হিসাবে গ্ৰহণ করিতে পারে তখন আর তারা অনাত্মীয়া থাকিবে কেন ? প্ৰান্তরবাহী এই পথের বুকে যে বিচ্ছিন্ন ও অসাধারণ জগতে তাদের সাক্ষাৎ হইয়াছে সেখানে একজনের কাছে অন্য জন শুধু মানুষ। কিন্তু জীবনের সাধারণ অসাধারণ বাস্তব অবাস্তব সমস্ত আবেষ্টনীর মধ্যেই ভয় আর সন্দেহ জীবনকে শুধু খাপছাড়া যাতনাভোগের নেশায় ভরিয়া রাখিয়াছে, তার মন কেন বেশীক্ষণ সঙ্গীলাভের স্বাভাবিক নিশ্চিন্ত ভাব আর মানুষকে মানুষ মনে করার সহজ বুদ্ধি বজায় রাখিতে পরিবে ? কোথা হইতে আসিতেছে আর কোথায় যাইবে এই চিরন্তন ধরা-বাধা প্রশ্নের পর সঙ্গী যখন জিজ্ঞাসা করিয়া বসে, সহরে সে করে কি, যাদবের মনে একটা খটকা লাগে। সত্য কথাটা বলা কি উচিত হইবে, সহরে সে চাকরী করে, গত এগার মাস ধরিয়া মাসে মাসে নিয়মিত বেতন পাইয়াছে ? SV