পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুজের স্বাদ “আমি বড় বিপদে পড়েছি, আমার বড় ছেলের কাল থেকে কলের । ওষুধ কিনবার পয়সা নেই-আপনি আমাকে কিছু সাহায্য করুন।” “আঁ৷ ? সাহায্য ?” বিব্রত ও বিরক্ত ভদ্রলোক পকেটে হাত দিয়া মনিব্যাগটা বাহির করেন। প্ৰথমে একটা সিকি বাহির করিয়া যাদবের দিকে একবার তাকান। সমস্ত রাত ফুক্তি করার ফলে মুখখানা যাদবের এমনি শুকনো দেখাইতেছিল যে সিকিটা বদলাইয়া গোটা একটা আধুলি তাকে দান করিয়া বসেন । কোথায় দশ টাকা, কোথায় আট আনা । একজন না। চাহিতেই দিয়াছিল, তারপর দুজনের কাছে সে চাহিয়াছে। একজন কিছুই দেয়। নাই, একজন একটি আধুলি দিয়াছে। কিন্তু যাদব ভাবে, একেবারে কিছু না পাওয়ার চেয়ে তাই বা মন্দ কি ? চাহিতে তো আর পরিশ্রম নাইট । দুজনের মধ্যে যদি একজন দেয়, দশজনের মধ্যে দিবে। পাঁচজন--পাচ আধুলিতে আড়াই টাকা। কুড়ি জনের কাছে চাহিলে পাঁচ টাকা, চল্লিশ জনের কাছে চাহিলে--- সাদব বুঝিতে পারিয়াছে, তার উস্কোথুস্কো চুল আর রূক্ষ চেহারা দেখিয়া মোটরের আরোহীটির দয়া হইয়াছিল। তাই মুখ-হাত সে আর ধোয় না, ফুটপাত ধরিয়া চলিতে চলিতে পথচারীদের মুখের দিকে চাহিয়া থাকে । পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় পর একজন বয়স্ক ভদ্রলোককে দেখিয়া মনে হয়, মোটরের লোকটির চেয়েও মুখে যেন তার দয়ার ভাবটা বেশী ফুটিয়া আছে। ভদ্রলোককে দাড় করাইয়া যাদব সবে তার ছেলের কলেরার ভণিতা আরম্ভ কবিয়াছে, তিনি এমন চটিয়া গেলেন, বলিবার ‘হঁ্যা, হঁ্যা, জানি, তোমার ছেলের কলেরা, মেয়ের বসন্ত, বৌয়ের টাইফয়েড-ভদ্রলোকের ছেলে তুমি, লজ্জা করে না তোমার ?” RR