পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ নেই বিশেষ, সঙ্গে যদি একটু আসেন আমার বাড়ী পৰ্য্যন্ত, আপনার ছেলের চিকিৎসার জন্য।--” বাড়ী বেশী দূরে নয়, কাছেই একটা গলির মধ্যে। মেজো মেয়ের কলেরায় মরণের বিবরণ দিতে দিতে বাড়ীর কাছে পৌছিয়াই ভদ্রলোক একেবারে কঁাদিয়া ফেলে। চোখ মুছিতে মুছিতে বাড়ীর মধ্যে চলিয়া যায়। কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হইতে থাকে যাদবের, সহজ উপায়ে রোজগারের চেষ্টা করিতে গিয়া প্ৰত্যেকবার যে সঙ্কোচ আর লজ্জার অনুভূতিটা মনের মধ্যে শুয়ো পোকার মত হাটিয়া বেড়াইয়াছে, এবার হঠাৎ যেন সেটা প্ৰকাণ্ড একটা সাপ হইয়া ফোস ফোস করিতে আরম্ভ করিয়া দিয়াছে। একবার যাদব ভাবে, ভদ্রলোক বাড়ীর ভিতর হইতে ফিরিয়া আসার আগে চম্পট দিবে ; আরও কতলোকের কাছে সাহায্য পাওয়া যাইবে, নাই বা সে গ্ৰহণ করিল। এই একজনের টাকা, যাচিয়া টাকা দেওয়ার জন্য যে তাকে সঙ্গে করিয়া বাড়ী নিয়া আসিয়াছে, ক’দিন আগে যার মেয়েটা মারা গিয়াছে কলেরায় ? ভদ্রলোক ফিরিয়া আসিয়া পাঁচটি টাকা যাদবের হাতে দেয় । *আর নেই ভাই, সত্যি নেই। থাকলে দিতাম, সত্যি দিতাম।” যাদবের ছেলের কলেরার চিকিৎসায় আরও কিছু সাহায্য করিতে না পারিয়া ভদ্রলোকের লজ্জা ও দুঃখের যেন সীমা থাকে না। এমনিভাবে যাদব রোজগারের সহজ উপায়টি সম্বন্ধে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিতে থাকে। চুলে সে তেল দেয় না, আঁচড়ায়ও না। কাজ হইতে বাড়ী ফিরিয়াই ছেড়া কাপড় জামা পরিয়া, ছেড়া একটি জুতা পায়ে দিয়া আবার বাহির হইয়া যায়। আজ সহরের এ অঞ্চলে, কাল সহরের ও অঞ্চলে বাছা বাছা মানুষকে নিজের দুঃখ দুৰ্দশার কাহিনী শুনাইবার চেষ্টা করে। কেউ শোনে, কেউ শোনেন, S8