পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূজা কমিটী মত ব্যাপারেও দুটি টাকা চাদ দিয়াই সে তার কর্তব্য শেষ হইয়া গিয়াছে মনে করে। পূজার ক'দিন পূজা-মণ্ডপে যখন পাড়ার অধিকাংশ লোকই অন্তত দিনের অৰ্দ্ধেকটা কাটাইয়া দেয়, বিকাশকে দশ পনের মিনিটের বেশী সেখানে দেখা যায় না । পাড়ার প্রত্যেকের মনে হয়, সকলকে সে যেন মনে মনে একটু অবজ্ঞা করে। পাড়ার সকলেই তাই মনে মনে তাকে একটু অবজ্ঞা করিবার চেষ্টা করে। কিন্তু সামনে পড়িলে অবজ্ঞা করার বদলে সকলেই কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ করে, বিকাশের দৃষ্টিপাতে বুদ্ধিটা সঙ্গে সঙ্গে একটু তীক্ষ হইয়া যাওয়ায় যেন অনুভব করিতে পারে যে, অবজ্ঞার প্রতিবাদে রাগ করিয়া বিকাশকে অবজ্ঞা করিতে চাহিয়া বিকাশের কাছে সকলে তারা যেন ছোট হইয়া গিয়াছেন । যার উপস্থিত ছিলেন, সকলেই প্ৰবীণ। নতুবা সকলকে ডাক দিয়া আসিবার জন্য বিকাশকে অনুরোধ করিতে গগনবাবুর হয় তো সাহস হইত না । এতগুলি প্ৰবীণ লোকের কাছে বসিয়া থাকার জন্যই বিকাশকে কিছু করিতে বলা যেন সহজ হইয়া গিয়াছিল। বিকাশ কিন্তু উদাসভাবে হাই তুলিয়া শুধু বলিল, “হ্যা, আবার ডাকতে হবে সবাইকে । না আসেন নাই আসবেন।” মনে মনে সকলে রাগ করিলেন, গগনবাবুও। কিন্তু বিকাশের ছেলেমানুষীতে যেন আমোদ পাইয়াছেন, এমনিভাবে হাসিয়া গগনবাবু বলিলেন, “রাগ করলে কি চলে বিকাশবাবু! তাহলে কি কাজ হয় ? মানিয়ে নিতে হয়-উপায় যখন নেই, মানিয়ে নিতে হয়। আমরা যারা এসেছি। যদি রাগ করে এখন যে যার বাড়ী চলে যাই, পূজো। হবে কি করে ?” বিকাশ বলিল, “নাইবা হল ?” NeOS)