পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ পড়ে, তবু কেদারবাবু এখনও সযত্নে দাড়ি গোঁফ কামান। বিকাশের মনে হয়, গগনবাবুর প্রস্তাব শুনিয়া র মুখের চামড়া একটু টান হইয়া পুলকের জ্যোতিতে যেন চকচকে দেং গতেছিল, এক বছরের জন্য তঁাকে পূজা কমিটীর স্থায়ী প্রেসিডেণ্ট করা হ। তছে না শুনিবা মাত্র আবার যেন র্তার মুখের চামড়া আলগা ও নম্প্রভ । ইয়া গেল। সভার কাজ আরম্ভ হইয়া যায়, উঠিয়া দাড়াইয়া সম্পাদক যতীনবাবু গত বছরের পূজার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আয়ব্যয়ের হিসাব পাঠ করেন ; বিকাশ ভাবিতে থাকে যে, মানুষ বোধ হয় জীবনে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা কিছুই সঞ্চয় করে না, সাত বছরের তীক্ষতা ও তীব্রতা ষাট বছরে শুধু ভোতা হইয়া আসে, খেলনা ছিনাইয়া লইলে সাত বছরের আৰ্ত্তিক্ৰন্দন ষাট বছরের মুখ স্নান হওয়ায় পরিণত হয়। । যতীনবাবু রিপোটটি লিখিয়াছেন ইংরাজীতে-বোধ হয় কাউকে দিয়া লিখাইয়া লইয়াছেন । ঠেকিয়া ঠেকিয়া, টোক গিলিয়া, শব্দের ভুল উচ্চারণ করিয়া তিনি প্রেসিডেণ্ট ও পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ জানান, বলেন যে, সকলের সাহায্য পাইয়া অক্ষম ও অকৰ্মণ্য হইয়াও কোন রকমে তিনি তঁর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করিয়াছেন। বলিতে বলিতে বিনয় ও দীনভাবের আতিশয্যে যতীনবাবু যেন গলিয়া যাইবেন। মনে হয়, সমবেত ভদ্রমণ্ডলীর কাছে সবিনয়ে মিথ্যা কথাগুলি বলিবার সুযোগ যে তিনি পাইয়াছেন, শুধু এই গর্বেই মুখখানা তার উজ্জল হইয়া গ্যাসের আলোটার সঙ্গে যেন পাল্লা দিতে চায়। বিকাশের মনে পড়ে, পূজার কাজের নামে পাড়ার ছেলেবুড়ার যখন পাত্ত মিলিত না, একদিকে অফিস করিয়া অন্যদিকে পূজার কাজে ছুটাছুটি করিয়া যতীনবাবু যখন প্ৰায় পাগল হইয়া পড়ার উপক্রম করিয়াছিলেন, বিকাশের কাছেই কি তীব্ৰ জ্বালার সঙ্গে নাটকীয় ভঙ্গীতে তিনি পাড়ার N98