পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
সমূহ।

আমাদের যায় নাই—এবং জীবন-ধর্মে যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার নিয়ম বর্তমান এখনো আমাদের মধ্যে তাহা কাজ করিতেছে।

 চরমনীতি বলিতেই বুঝায় হালছাড়া নীতি, সুতরাং ইহার গতিটা যে কখন্ কাহাকে কোথায় লইয়া গিয়া উত্তীর্ণ করিয়া দিবে তাহা পূর্ব্ব হইতে কেহ নিশ্চিন্তরূপে বলিতে পারে না। ইহার বেগকে সর্ব্বত্র নিয়মিত করিয়া চলা এই পন্থার পথিকদের পক্ষে একেবারেই অসাধ্য। তাহাকে প্রবর্ত্তন করা সহজ, সম্বরণ করাই কঠিন।

 এই কারণেই, আমাদের কর্ত্তৃপক্ষ যখন চরমনীতিতে দম লাগাইলেন তখন তাঁহারা যে এতদূর পর্যন্ত পৌঁছিবেন তাহা মনেও করেন নাই। আজ ভারতশাসনকার্য্যে পুলিশের সামান্য পাহারাওয়ালা হইতে ন্যায়দণ্ডধারী বিচারক পর্যন্ত সকলেরই মধ্যে স্থানে স্থানে যে অসংযম ফুটিয়া বাহির হইতেছে, নিশ্চয়ই তাহা ভারতশাসনের কর্ণধারগণের অভিপ্রেত নহে। কিন্তু গবর্মেণ্ট ত একটা অলৌকিক ব্যাপার নহে, শাসনকার্য্য যাহাদিগকে দিয়া চলে তাহারা ত রক্তমাংসের মানুষ, এবং ক্ষমতামত্ততাও সেই মানুষগুলির প্রকৃতিতে অল্পাধিক পরিমাণে প্রবেশ করিয়াছে। যে সময়ে প্রবীণ সারথীর প্রবল রাশ ইহাদের সকলকে শক্ত করিয়া টানিয়া রাখে তখনো যদিচ ইহাদের উচ্চগ্রীবা যথেষ্ট বক্র হইয়া থাকে তথাপি সেটা রাজবাহনের পক্ষে অশোভন হয় না; কিন্তু তখন ইহারা মোটেব উপরে সকলেই এক সমান চালে পা ফেলে; তখন পদাতিকের দল একটু যদি পাশ কাটাইয়া চলিতে পারে তবে তাহাদের আর অপঘাতেব আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু চরমনীতি যখনই রাশ ছাড়িয়া দেয় তখনি এই বিরাট শাসনতন্ত্রের মধ্যে অবারিত জীবপ্রকৃতি দেখিতে দেখিতে বিচিত্র হইয়া উঠে। তখন কোন্ পাহারাওয়ালার যষ্টি যে কোন্ ভালমানুষের কপাল ভাঙিবে এবং কোন্ বিচারকের হাতে আইন যে কিরূপ ভয়ঙ্কর বক্রগতি অবলম্বন করিবে তাহা কিছুই বুঝিবার উপায় থাকে না; তখন প্রজাদের মধ্যে যে