পাতা:সম্রাট্‌ ও সম্রাট্‌-মহিষীর ভারত পরিদর্শন - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO ভারত-পরিদর্শন । নয়নাভিরাম রাজপ্ৰাসাদটি এখনও বর্তমান আছে, প্ৰাসাদগাত্রে খোদিত লিপি উহাকে মৰ্ত্ত্যের স্বৰ্গ বলিয়া আজও ঘোষণা করিতেছে । সেই প্ৰাচীন মসজিদটি “মহম্মদের” উপস্থিতির সুখস্বপ্ন আজও বক্ষে ধারণ করিয়া Na VNC ১৯১১ সনের দিল্লী অন্যান্য প্রাচ্যনগরীর ন্যায় পরস্পরবিরোধী দৃশ্য-পূর্ণ। একদিকে অপরিমিত ঐশ্বৰ্য্যের চিহ্ন, অন্যদিকে দারিদ্র্যের কঙ্কালসার । একদিকে রাজমুকুট, অন্যদিকে দরিদ্রের জীর্ণকস্থা। আধুনিক দিল্লী বহুরাজ্যের শ্মশান, অথচ লোকপূর্ণ। বাতান্দোলিত শস্যসমুদ্র ইহার প্রাচীর। পৰ্যন্ত আসিয়াছে, এমনকি ভিতরেও প্রবেশ করিয়াছে। পুরাতন মৃত্তিকা গৃহগুলি এমনই জীর্ণ হইয়াছে যে মনে হয় এগুলি বর্ষা আসিলেই ধসিয়া পড়িবে। অপরদিকে, এই নগরের মাঝে মাঝে বৈদ্যুতিক ট্রাম লাইন, চলন্ত মিল সমূহ এবং কলকারখানা প্ৰভৃতি আধুনিক জীবনোপযোগী যাহা আবশ্যক তাহা সমস্তই আছে। হিন্দুস্থানের উর্বরতম অংশে বহুবৎসর সুখশান্তি ভোগ করায় দিল্লীর জনসংখ্যা একদা অত্যন্ত বৃদ্ধিপ্ৰাপ্ত হইয়াছিল। ১৯১১ সনের আদমসুমারিতে দেখা গিয়াছে, এখানকার লোকসংখ্যা দুই লক্ষ তেত্রিশসহস্ৰ, অর্থাৎ ইহা ভারতবর্ষের মহানগরী সমুহের মধ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করিয়াছে। এই সঙ্গে দিল্লীর ব্যবসায়িশ্রেণীর উত্থান এবং রেলওয়ের বিস্তৃতি হেতু (দিল্লী হইতে রেলওয়েতে কলিকাতা, করাচী, পেশোয়ার ও বোম্বাই সমদূর) স্থানীয় ব্যবসায় ও বাণিজ্যের এমন উন্নতি হইয়াছে যে ইহা এখন সমস্ত উত্তরভারতের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্ৰে পরিণত হইবার লক্ষণ দেখাইতেছে। ফল এই দাড়াইয়াছে যে এই নগরের শ্ৰীবৃদ্ধির সঙ্গে মিউনিসিপালিটির আয় কিছুতেই আঁটিয়া উঠিতে পারিতেছে না। এই স্থানের প্রত্যেক অংশেই জনসংখ্যা অত্যন্ত বৃদ্ধি পাইয়াছে, অথচ উপযুক্ত স্বাস্থ্যরক্ষার ব্যবস্থা কিছুতেই হইয়া উঠিতেছে না। রাজপথগুলি অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং যাতায়াতের অসুবিধা ক্রমেই বাড়িয়া যাইতেছে। মনে হয় দিল্লী যেন তাহার প্রাচীন দৈনন্দিন জীবনের উপকরণ ছাড়া হঠাৎ এতটা শ্ৰীবৃদ্ধির জন্য প্ৰস্তুত ছিল না । সম্রাটু যদি কলিকাতা কিংবা বোম্বাইতে দরবার করিতে মনস্থ করিতেন, তবে উৎসবের মুখ্য ক্রিয়া ভিন্ন আর কিছুরই ব্যবস্থার জন্য ভাবিতে হইত না, কারণ এই মহানগরীন্বয়ের ঐশ্বৰ্য ইউরোপীয় মহানগরী সমুহের অনুরূপ।