পাতা:সম্রাট্‌ ও সম্রাট্‌-মহিষীর ভারত পরিদর্শন - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-পরিদর্শন । VS সেলিমগড়ের সীমার মধ্যে প্ৰবেশ করিয়াছে। সেলিমগড় একসময়ে কোন এক সৌভাগ্যান্বেষী দুঃসাহস আফগানের দুৰ্গরূপে গণ্য ছিল। এখন বাদসাহী প্রাসাদের উত্তরসীমায় দুগের বহির্ভাগস্থ সীমানার সহিত গড়খাইএর উপরে সেতু দ্বারা সংযোজিত হইয়াছে। সেতুর দুই দিকে সু-উচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত। রেল লাইন সেলিমগড়ের মধ্য দিয়া আর একটি সেতু অতিক্রম করিয়া আনুমানিক এক মাইল দূরে দিল্লীর প্রধান স্টেশন পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। সম্রাটু এই ষ্টেশনে গোপনে অবতীর্ণ হইয়া অকস্মাৎ পুরাতন দুগের দ্বারপ্রান্তে প্ৰজাদিগকে দর্শন দান করিবেন। এইরূপ সংকল্প করিয়াছিলেন। সময়ের কি অদ্ভুত পরিবর্তন ! দুর্গের যে উচ্চ চুড়া প্ৰায় চারিশত বর্ষ পূর্বে কোন এক সম্রাটের আগমনের প্রতিরোধের জন্য নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, আজি তাহা আর এক সমাটের অভ্যর্থনার মঙ্গলচিহ্নীরূপে ব্যবহৃত হইল । রাজদর্শন যে ভারতবাসীর পক্ষে কি ব্যাপার তাহা সম্রাটুই বিশেষভাবে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিয়াছিলেন, এজন্য তঁহার স্বভাবতই ইচ্ছা হইয়াছিল যেন তিনি বহুসংখ্যক প্ৰজাকে দর্শন দিতে পারেন ৷ প্ৰজাবৰ্গ যো-পথে তাহাকে সম্বৰ্দ্ধনা করিবে, সেই পথ নিৰ্ণয় করা একটা গুরুতর চিন্তার বিষয় হইয়া দাড়াইয়াছিল, রাজপ্ৰতিনিধি স্বয়ং সেই পথ নির্বাচিত করিয়া দিয়াছিলেন। সম্রাটু-দম্পতী একান্তরূপে ক্লান্ত না হইয়া পড়েন, এবং অনুচরসৈন্যগণ যতটা শ্রম সহ করিতে পারে, এই দুই দিকে লক্ষ্য রাখিয়া রাজার নগরপরিদর্শনের পথ যথাসম্ভব দীর্ঘ করা হইয়াছিল। এই রাজপথ মোগল সম্রাটুদিগের চিরন্তন প্রথানুযায়ী দুর্গের অভ্যন্তরস্থিত দিল্লী প্ৰবেশদ্বার হইতে আরম্ভ করিয়া ঈষৎ বক্ৰভাবে তরুরাজিসমন্বিত ভূমিখণ্ডের মধ্য দিয়া ক্রমশঃ উচ্চ হইয়া জুম্মা মসজিদ পৰ্যন্ত স্পর্শ করিয়াছিল। এই মসজিদের দুই পার্শ্ব হইতে নগরের মনোহর সৌধশ্রেণীর উৰ্দ্ধভাগ দৃষ্ট হয়। এই পথ দিয়া প্ৰাচীনকালে মোগলসম্রাটগণ সুদৰ্শন প্ৰহারিবেষ্টিত হইয়া স্বর্ণমণ্ডিত চৌদোলায় আরোহণপূর্বক সাধারণ প্ৰজাগণের দৃষ্টির দুর্লভ হইয়া প্ৰতি শুক্রবার প্রার্থনা করিতে যাইতেন। তৎকালীন ফরাসী পৰ্যটক ট্যাভারনিয়ার এই পথে সহস্ৰসৈন্যপরিবেষ্টিত আরংজীবকে যাইতে দেখিয়াছেন, তখন তাহার পুরোভাগে বিপুলকায় হস্তিদল রাজচিহ্ন বহন করিয়া মন্থরগতিতে অগ্রসর হইত । একদিকে বিশাল দুৰ্গ, অন্যদিকে বিচিত্রমসজিদচুড়াবলী মনোরম শীতের নবগঠিত রাজপথ ।