পাতা:সরস গল্প - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অতয়ের অনিদ্রা ও ভাবনায় রূপান্তরিত হইল। সে কিংকৰ্তব্যবিমূঢ় হইয়া শয্যার উপর অবশভাবে বসিয়া রহিল। কি সে করিবে ? চিৎকার করিবে, না জ্ঞান হারাইয়া ফেলিবে ? ভাবিয়া সে কুল-কিনারা পাইল না। সে ছেলেবেলায় কত ভৌতিক কাহিনী পড়িয়াছে, আজ কেমন যেন সেই সব নানা ভৌতিক ব্যাপার জীবন্ত হইয়া উঠিল! সে বন্ধ-জানালা-দরজার পানে সচকিত চিত্তে একদৃষ্টি চাহিয়া রহিল। কে জানে কোন মুহুর্তে দমকা বাতাসে জানালা-দরজাগুলি হুড়মুড় করিয়া খুলিয়া যায় । অকস্মাৎ আবার সেই পূর্বের ন্যায় দ্বারে শব্দ হইল। বাতির হইতে মানুষে যেন দ্বার ঠেলিতেছে। অভয় ছুটিয়া দ্বারপ্রান্তে গিয়া সেই ফুটা দিয়া বাহিরে তাকাইল। কিন্তু আশ্চৰ্য, স্কুল দৃষ্টিতে দেখিল একটি হৃষ্টপুষ্ট ভিটামিনের মাপকাঠির চিহ্নস্বৰূপ পাঞ্জাবী ইদুব হনহন করিয়া তাহার রুদ্ধদ্বারে মাথা খুড়িয়া পলাইয়া গেল । বিপুল বিস্ময়ে অভয়ের মুখে কোন কথা সরিল না, কেবল তৃপ্তির ও প্ৰশান্তির হাসি খেলিয়া গেল। যাহা হউক, যদি ডাকাতই পড়িত বা চোরই আসিত । কতদিন হইতে সে ভাবিয়াছে গহনাপত্ৰ পয়সা-কড়ি অন্যত্র সাবধানে রাখিয়া দিবে, কিন্তু ফুরসন্ত পায় নাই। তাই আজি গুপ্তস্থান হইতে চাবি বাহির করিয়া সিন্দুক খুলিয়া দেখিবে তাহার সবকিছু মজুত আছে কিনা। ধীরে ধীরে সে সিন্দুক খুলিয়া ফর্দ মিলাইয়া তাহার সম্পত্তি দেখিতে লাগিল। ফৰ্দ মিলাইতে মিলাইতে তাহার তৃষ্ণা পাইয়া গেল। ভাবিল বকুলকে জল আনিতে বলে, হয়তো বলিতও তাহাকে, যদি-না তৎক্ষণাৎ মনে পড়িত তাহার মৃত্যুর কথা। না, একটা চাকর ও একটা ঝি না। রাখিলে চলিবে না। বকুল আসিয়া পৰ্যন্ত সে উহাদের বিদায় করিয়াছিল ; কিন্তু আজ তো তাহদের না হইলে অভয়ের আদৌ চলে না । কম করিয়াও খাওয়া-পরা বাদে তাহাদের জন্য অভয়কে মাসে অন্তত দশটা টাকা ব্যয় করিতে হইবে, বৎসর শেষে SO