পাতা:সরস গল্প - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতিভূষণ • সরস, গল্প তাহার পর আমাদের সঙ্গে সে নাগপুরে ফিরিল ! শুনিলাম সে এবারও পরীক্ষায় পাশ করিতে পারে নাই। আমাদের পাইয়া মূলো ছেলেমানুরের মত খুশী । চাপোবার দুগ্ধমন্দিরে লইয়া গিয়া আমাদের মিষ্টান্ন শরবত খাওয়াইয়া দিল । শুনিলাম দেশে তাহার মা মারা গিয়াছেন এই বৎসরেই । বলিল-বড় একলা বোধ করি এখানে । মিশধ কার সঙ্গে ? এখানে মেশবার লোক নেই। বাঙালীদের সঙ্গে মিশে আরাম। গোরেওয়াড় লেকে মাঝে মাঝে গিয়ে বসে থাকি। বেশ লাগে । একদিন ওখানে বেশ কেটেছিল । মনে আছে সেই আমাদের পিকনিক ? ওরা কোথায় যে তা তো জানি নে । দেখিলাম মূলোর চোখের সামনে ভাসিয়া উঠিল একটা ছবিকয়েক শত বৎসর পূর্বের রাজপুতানায় বিশাল মরুভূমির মধ্যে উটের পিঠে চড়িয়া ইহার সেই বীর পূর্বপুরুষ চলিয়াছে জয়সিংহের সৈন্যদলের সহিত দেওধার যুদ্ধে, সেলিমগড়ের যুদ্ধে-চওড়া গালপাট্টাওয়ালা রুক্ষ-দর্শন মুখাবয়ব, দীর্ঘ; দেহ, পাশে খোলা দীর্ঘ দুধার তলোয়ার, হাতে সাত হাত লম্বা বন্দুক-মৃদুতা নাই, ভয় নাই-কবাটের মত বিশাল বক্ষে জলন্ত দুঃসাহস-কাহার সাধ্য ছিল তাহার মনোনীত কন্যাকে স্পর্শ করে ! সে ছিনাইয়া আনিত তাহার। প্ৰণয়িনীকে যে কোন লোকের হাত হইতে। লড়িত, খুন করিত। আধুনিক যুগের আবহাওয়ায় জয়সিংহের সৈন্স দলের সেই বীর নায়কের বংশধর এই সাহেবী পোশাক-পরা, নিখুত টাই বাধা, ঘাড়চাচা, ক্লিন শেভডি, হাতে রিষ্টওয়াচ বাধা ছোকরা নিতান্ত নিরুপময়। কবিতা লেখা বা চোখের জল ফেলা ছাড়া সে হারানো প্ৰণয়িনীর জন্য কি করিতে পারে ? বিশেষত যখন দুইবার ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী না পাইয়া সে আরও দমিয়া গিয়াছে । ছোকরার জন্য এই সর্বপ্রথম দুঃখ হইল । 8 .