পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ

 চুলের প্রায় তিনভাগ সাদা বিধুর, বয়স তাে গিয়াছে ষাটে। তা ছাড়া শরীরটাতে ধরিয়াছে ভাঙ্গন। ত্রিশ বছর আগে এরকম মুখ করিয়া এত দরদের সঙ্গে এরকম একটা প্রশ্ন করা চলিত, এখন আর চলে না। করুণা, করুণার বৌ, করুণার মেয়ে আর বাঙ্গা চারজনেরই সর্ব্বাঙ্গে তাই রােমাঞ্চ দেখা দিল। করুণার মেয়ের কোলের আড়াই বছরের শিশুটা পর্যন্ত আবহাওয়ার মধ্যে একটা দুর্ব্বোধ্য ভয়ানক কিছুর আবির্ভব টের পাইয়া কাঁদিয়া ফেলিল।

 মােটের উপর অবস্থাটা দাঁড়াইয়া গেল কুৎসিৎ। প্রাণাধিকের মৃতদেহটা জড়াইয়া ধরিয়া একটু বেহিসাবী রকমের বেশী সময় কাঁদাকাটা করার পর নাকে পচা গন্ধ লাগিতে আরম্ভ করিলে যেমন বীভৎস অবস্থার সৃষ্টি হয়।

 যাই হােক, রবীন্দ্রকাব্যের চোলাই-খানার দেশে তামাসা করাটা সব অবস্থাতেই সােজা এবং নিরাপদ। করুণার বৌ তাই মেয়ের কোল হইতে মেয়ের ক্রন্দনপরায়ণ ছেলেকে নিজের কোলে নিয়া তার হাঁ করা মুখে হাত চাপা দিয়া বলিল, ‘বলনা খোকন তাের দাদুকে, তুমি এসেছ দাদামশাই এবার দিদিমার শরীল ভাল হবে, সম্বচ্ছর কেঁদে কাটালে শরীল খারাপ হবে না একটু?’

 বাঙ্গা বলিল, ‘কি বেহায়াপনা করিস! সম্বচ্ছর কেঁদে কাটাই না তাের মাথা।’

 মুখে হাত চাপা দেওয়ায় খােকনের ফাঁপর লাগিবার উপক্রম হইয়াছে, তবু করুণার বৌ হাত সরাইল না। মুখ নীচু করিয়া একটু হাসিয়া বলিল, ‘আমার কাছে কি লুকোনাে আছে দিদি, কত রাত কেঁদে কাটাতে দেখেছি!’