পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩
বন্যা

 আলতামণি এ পরামর্শ শুনিল না, পাখা দিয়াই হাওয়া করিতে লাগিল। তবে অধীর ব্যাকুলতার সঙ্গে নয়, ধীরে ধীরে।

 খানিক পরে মহিম বলিল, ‘এবার যাই আমরা?’

 ‘না মামা না, ভোরবেলা তক্ বোসো, পায়ে ধরি তোমাদের।'

 ভৈরব অন্ধকারে হাসিয়া বলিল, ‘এত ভয়কাতুরে যদি তুই, কানাই তো ক’দ্দিন রাতে ঘরে থাকে না, একা থাকিস কি করে শুনি?’

 ‘আজ যে চেতন নেই মামা।’

 পাখাটা কানাই-এর মাথায় ঠেকিয়া যাওয়ায় মাচানের উপর পাখাটা একবার ঠুকিয়া আলতামণি আবার বাতাস করিতে লাগিল।

 তারপর অস্ত যাওয়ার আগেই চাঁদ ঢাকিয়া গেল মেঘে, ঝমঝম করিয়া বৃষ্টি হইয়া যাওয়ার পর আবার আকাশ পরিষ্কার হইয়া দু’একটা তারা ফুটিয়া উঠিবার চেষ্টা করিতে করিতে ভোরের আলোয় ধীরে ধীরে ম্লান হইয়া মিলাইয়া গেল। চারিদিকে চাহিয়া দেখিতে আর কোন বাধা রহিল না। তবে দেখিবার কিছু নাই। এ বন্যা, আর কিছু নয়। বন্যা দর্শনীয় নয়, বর্ণনীয় নয়। বুক চাপড়াইবার, মাথা কপাল ঠুকিবার যা’ কারণ, উপবাসে আর রোগে মরণ ঘটিবার যা’ কারণ, আগামী বন্যায় বুক চাপড়াইয়া মাথা কপাল ঠুকিয়া উপবাস করিয়া আর রোগে ভুগিয়া মরা পর্যন্ত রাক্ষুসে জোঁকের কাছে ঋণী থাকিবার যা’ কারণ, তার মধ্যে পর্যন্ত দেখিবার মত কিছু নাই, বর্ণনা করিবার মত কিছু নাই। চারিদিক জলে ডুবিয়া আছে, বন্যার এই চরম দেখা। চারিদিক জলে ডুবিয়া গিয়াছে, বন্যার এই চরম বর্ণনা।

 ভৈরব শেষ বিড়িটা ধরাইবে কি না ভাবিতেছিল। বিড়িটা জমাইয়া রাখিবার আর বোধ হয় দরকার নাই। মহিমের ডিঙ্গিতে তার হারান