পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



মমতাদি

 শীতের সকাল। রোদে ব’সে আমি স্কুলের পড়া করছি, মা কাছে ব’সে ফুলকপি কুটছেন। সে এসেই বলল, আপনারা রান্নার জন্য লােক রাখবেন? আমি ছােট ছেলে-মেয়েও রাখব।

 নিঃসঙ্কোচ আবেদন। বােঝা গেল সঙ্কোচ অনেক ছিল, প্রাণপণ চেষ্টায় অতিরিক্ত জয় করে ফেলেছে। তাই যেটুক সঙ্কোচ নিতান্তই থাকা উচিত তাও এর নেই।

 বয়স আর কত হবে, বছর তেইশ। পরণে সেলাই করা ময়লা সাড়ী, পাড়টা বিবর্ণ লাল। সীমান্ত পর্যন্ত ঘােমটা, ঈষৎ বিশীর্ণ মুখে গাঢ় শ্রান্তির ছায়া, স্থির অচঞ্চল দুটি চোখ। কপালে একটি ক্ষত-চিহ্ন—আন্দাজে পরা টিপের মত।

 মা বললেন, তুমি রাঁধুনী?

 চমকে তার মুখ লাল হল। সে চমক ও লালিমার বার্ত্তা বােধ হয় মার হৃদয়ে পৌঁছল, কোমল স্বরে বললেন, বােসে বাছা।

 সে বসল না। অনাবশ্যক জোর দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ আমি রাঁধুনী। আমায় রাখবেন? আমি রান্না ছাড়া ছোট ছােট কাজও করব।’

 মা তাকে জেরা করলেন। দেখলাম, সে ভারি চাপা। মার প্রশ্নের ছাঁকা জবাব দিল, নিজে থেকে একটি কথা বেশী কইল না। সে বলল, তার নাম মমতা। আমাদের বাড়ী থেকে খানিক দূরে জীবনময়ের গলি, গলির ভেতরে সাতাশ নম্বর বাড়ীর একতলায় সে থাকে। তার স্বামী