পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯
মমতাদি

করে লিখতে পারলে সাহিত্যে না হােক আমার কাছে সব চেয়ে মূল্যবান লেখা হয়ে উঠত।

 হঠাৎ মা এলেন। সে দুহাতে আমাকে এরকম জড়িয়েই ধ’রে ছিল, হাত সরিয়ে ধরা-পড়া চোরের মত হঠাৎ বিব্রত হয়ে উঠল, দুচোখে ভয় দেখা দিল। কিন্তু সে মুহুর্তের জন্য। পরক্ষণে আমার কপালে চুম্বন ক’রে মাকে বলল, এত কথা কইতে পারে আপনার ছেলে!

 তখন বুঝিনি আজ বুঝি স্নেহে সে আমায় আদর করেনি, নিজের গর্ব্ব প্রতিষ্ঠার লোভে। মা যদি বলতেন, খোকা উঠে আয়,—যদি কেবল মুখ কালাে করে সরে যেতেন, পরদিন থেকে সে আর আসত না। পনের টাকার খাতিরেও না, স্বামীপুত্রের অনাহারের তাড়নাতেও না।

 মা হাসলেন। বললেন, ও, ওইরকম। সারাদিন বক বক করে। বেশী আস্কারা দিও না, জ্বালিয়ে মারবে।

 ব’লে মা চ’লে গেলেন। তার দুচোখ দিয়ে দুফোঁটা দুর্ব্বোধ্য রহস্য টপ টপ ক’রে ঝ’রে পড়ল। মা অপমান করলে তার চোখ হয়ত শুকনােই থাকত, সম্মানে চোখের জল ফেলল! সে সম্মানের আগাগােড়া করুণা ও দয়া মাখা ছিল, সেটা বোধ হয় তার সইল না।

 তিন চার দিন পরে তার গালে তিনটে দাগ দেখতে পেলাম। মনে হল, আঙ্গুলের দাগ। মাষ্টারের চড় খেয়ে একদিন অবনীর গালে যে রকম দাগ হয়েছিল তেমনি। আমি ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করলাম, তােমার গালে আঙ্গুলের দাগ কেন? কে চড় মেরেছে?

 সে চমকে গালে হাত চাপা দিয়ে বলল, দূর! তারপর হেসে বলল,