পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
৪০

 কী! উনুন ধরাবে কে, ভাত চাপাবে কে?

 তুমি। আমার আজ সময় নেই।

 তোর সময়ের নিকুচি করেছে! রোজ ভাত নামিয়ে নিই তাই তোর বাবার ভাগ্যি তা জিনিস? উনুন ধরা ভাত চাপা, তারপর যেখানে খুসী মরবি যা। মমতাদি উঠানে নেমে পড়েছিল, রোয়াকে উঠল। বলল, বেশ, সব করে দিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু কাল চাকরী গেলে আমায় মারতে উঠোনা যেন!

 জোঁক ফণা ধরেছিল, মুখে নুন পড়া মাত্র নরম হয়ে গেল।

 চাকরী যাবে কেন?

 কেন? বেশ! সময় মত কাজে না গেলে কে পয়সা দিয়ে লোক রাখে? নটা বাজতে না বাজতে নাকে মুখে ভাত গুঁজে আপিসে ছোট কি জন? তোমার চাকরী, আমার চাকরী নয়?

 নগেন একদম কাদা হয়ে গিয়ে বলল, তোমার কাজে যাওয়ার সময় নাকি? তবে তুমি যাও। দেরী কোরোনা, চলে যাও। এদিকে যা হবার হবে।

 মমতাদি হাসল, এদিকে সব হবে, তুমি ভেবোনা। খোকার অসুখ, আমি শীগগির ফিরে আসব।


 মাস চারেক পরে আমিও বুঝলাম তার ছেলে হবে। আরও মাসখানেক সে কাজ করল, তারপর বাধ্য হয়ে আসা বন্ধ করল। দশবার দিন পরে খবর নিতে গেলাম। দেখলাম রোয়াকের যে প্রান্তটা খালি ছিল সেখানে চাঁচের বেড়ার আঁতুড় ঘর নির্ম্মিত হয়েছে। ছাদটাও চাঁচের, তবে তার ওপরে একটা ছেঁড়া সতরঞ্চি বিছান। ছেঁড়া মলিন বিছানায়