পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ

 ‘বলিনি কিছু, জিগ্‌গেস করছি। তোমার একটির বেশী কাচ্চা-বাচ্চা হয়নি তো, মাথার চুলে পাক ধরেছে, তবু যে কনে বৌটির মত লজ্জা সরম রেখে চলেছ এটা সেইজন্য কি-না, তাই জিগ্‌গেস করছি। জিগ্‌গেস করলে তো দোষ নেই দিদি? তোমায় জিগ্‌গেস না করলে কাকেই বা জিগ্‌গেস করব বল? তুমি হলে গিয়ে, কি যেন বলে, সব জান্তা।—’

 চুলে পাক ধরিয়াছে? ধরুক। স্বাভাবিক নিয়মে ঠিক বয়সে পাক ধরিয়া সমস্ত চুল শণের নুড়ি হইয়া যাক। কিন্তু মন কেমন করিয়া মাথা ঝিম-ঝিমানির জন্য অসময়ে মাথার চুল সাদা হইবে কেন? সে কি বরদাস্ত হয় মানুষের? কে জানিত মাথা ঝিম-ঝিম করার এমন একটা কুফল আছে!

 কপাল পোড়া, তাই অসময়ে জানিতে হইল। এতকাল না জানিয়া কাটিয়াছিল, আরও কয়েকটা দিনও না হয় কাটিত। বছরে চারটি দিনের জন্য বিধুশেখর বাড়ী আসে, তার ঠিক কয়েকটা দিন আগে এমন চাঞ্চল্যকর জ্ঞান নাই বা জুটিত। বিধুশেখর ফিরিয়া যাওয়ার পর জুটিলে জ্ঞানটা নাড়াচাড়া করার সময় পাওয়া যাইত একটা বছর। এক বছরে নূতনত্ব ঘুচিয়া যাইত জ্ঞানের, আর চঞ্চল করিতে পারিত না। বছরে চারদিনের জন্য যে স্বামীকে কাছে পায়, দুর্ভাবনা দিয়া স্বামীকে অভ্যর্থনা করা তার পক্ষে মহাপাপ। অন্ততঃ স্বামী তো একটা মারাত্মক ভুল-বোঝা বুঝিয়া ফেলিবার সুযোগ পাইবে। মনে তো করিয়া বসিবে যে বৎসরান্তে চারদিনের জন্য স্বামীকে কাছে পাইয়াও অন্যবারের মত বৌটা খুসী পর্য্যন্ত হয় নাই, মুখটা হাঁড়ি করিয়া আছে। তারপর ভাবিয়া চিন্তিয়া হয় তো ঠিক করিয়া ফেলিবে যে, এমন বৌয়ের কাছে বছরে চারদিনের জন্যও আর তবে আসিয়া কাজ নাই! ব্যস, আর আসিবে না। দিন