পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাধনা ৷ যাহা হউক, আমাদের উপরে এই ছড়াটি রচনার ভার থাকিলে খুব সম্ভব ভূমিকাটা রীতিমত ফাদিয়া বসিতাম ; এমন আচমকা মাঝখানে আরম্ভ করিতাম না। প্রথমে, একটা পরীক্ষাশালার বর্ণনা করিতাম, সেটা যদি বা ঠিক সেনেটহলের মত না হইত, অনেকট ঈভুনগার্ডনের অনুরূপ হইতে পারিত। এবং তাহার সহিত জ্যোৎস্নার আলোক, দক্ষিণের বাতাস এবং কোকিলের কুহুধবনি যোগ করিয়া ব্যাপারটাকে বেশ একটুখানি জমজমাট করিয়া তুলিতাম –আয়োজন অনেক রকম করিতে পারিতাম কিন্তু এই সরল সুন্দর কন্যাটি—যাহার মাথার কেশ ফিঙ্গের অপেক্ষা কালো, হাতের শাখা রাজহংসের অপেক্ষ ধলো, সিঁথার সিঁদুর কুসুমফুলের অপেক্ষ রাঙা, স্নেহের কোল ছেলের কথার অপেক্ষা মিষ্ট এবং বক্ষঃস্থল শীতল জলের অপেক্ষ স্নিগ্ধ—সেই মেয়েটি—যে মেয়ে সামান্ত কয়েকটিমাত্র স্তুতিবাক্য শুনিয়া সহজে বিশ্বাস ও সরল আনন্দে আত্মবিসর্জন করিতে প্রস্তুত হইয়াছে তাহাকে আমাদের সেই বর্ণনাবহুল মার্জিত ছন্দের বন্ধনের মধ্যে এমন করিয়া চিরকালের মত ধরিয়া রাখিতে পারিতাম না। কেবল এই ছড়াটি কেন, আমাদের উপর ভার দিলে আমরা অধিকাংশ ছড়াই সম্পূর্ণ সংশোধন করিয়া নুতন সংস্করণের যোগ্য করিয়া তুলিতে পারি। এমন কি, উহাদের মধ্যে সৰ্ব্বজনবিদিত নীতি এবং সৰ্ব্বজনছৰ্ব্বোধ তত্ত্বজ্ঞানেরও বাসা নিৰ্ম্মাণ করিতে পারি। কিছু না হোক, উহাদিগকে আমাদের বর্তমান শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থার উন্নততর শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করিয়া দিতে পারি ! বিবেচনা করিয়া দেখুন আমরা যদি কখনো আমাদের বর্তমান সভ্যসমাজে চাদকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া আর্মিতে ইচ্ছা করি তবে কি তাহাকে নিম্নলিখিতরূপে তুচ্ছ প্রলোভন দেখাইতে পারি ? - মেয়েলি ছড়া । আয় আয় চাদ মামা টা দিয়ে যা ! চাদের কপালে চাদ টা দিয়ে যা ! মাছ কুছলে মুড়ো দেব, - o ধান ভান্লে কুঁড়ে দেব, * কালো গরুর দুধ দেব, দুধ খাবার বাটি দেব, - চাদের কপালে চাদ টা দিয়ে যা ! এ কোন চাদ ! নিতান্তই বাঙ্গালীর ঘরের চাদ । এ আমাদের বাল্যসমাজের সর্বজ্যেষ্ঠ সাধারণ মাতুল চাদ। এ আমাদের গ্রামের কুটীরের নিকটে বায়ু আন্দোলিত বাশ-বনের রন্ধগুলির ভিতর দিয়া পরিচিত স্নেহহাস্তমুখে প্রাঙ্গণধুলিবিলুষ্ঠিত উলঙ্গ শিশুর খেলা দেখিয়া থাকে ইহার সঙ্গে আমাদের গ্রামসম্পর্ক আছে। নতুবা, এতবড় লোকটা,-যিনি সপ্তবিংশতি নক্ষত্রসুন্দরীর অস্তঃপুরে শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ যাপন করিয়া থাকেন, যিনি সমস্ত স্বরলোকের স্থধারস আপনার অক্ষয় রৌপ্যপাত্রে রাত্রিদিন রক্ষা করিয়া আসিতেছেন সেই শশলাঞ্ছন হিমাংশুমালীকে মাছের মুড়ো ধানের কুড়ো কালে গরুর দুধ খাবার বাটির প্রলোভন দেখাইতে কে সাহস করিত । আমরা হইলে বোধ করি পারিজাতের মধু, রজনীগন্ধার সৌরভ, বেী-কথা-কওয়ের গান, মিলনের হাসি, হৃদয়ের আশা, নয়নের স্বপ্ন, নববধূর লজ্জা প্রভৃতি বিবিধ অপূৰ্ব্বজাতীয় দুর্লভ পদার্থের ফর্দ করিয়া বসিতাম –তথাচ চাদ তখনো যেখানে ছিল এখনো সেইখানেই থাকিত । কিন্তু ছড়ার চাদকে ছড়ার লোকেরা মিথ্যা প্রলোভন দিতে সাহস করিত না-খোকার কপালে টা দিয়া যাইবার জষ্ঠ নামিয়া আসা চাদের পক্ষে যে একে

  • o