সাধন । גלי: E ইহার ভিতরকার সমস্ত মৰ্ম্মান্তিক কাহিনী, সমস্ত দুৰ্ব্বিষহ বেদনা-পরম্পরা কে বলিয়া দিবে ! দিনে দিনে রাত্রে রাত্রে মুহূর্তে মুহুর্তে কত সহ করিতে হইয়াছিল—এমন সময়, সেই স্নেহস্থতিহীন স্থখহীন পরের ঘরে হঠাৎ একদিন তাহার পিতৃগৃহের চিরপরিচিত ব্যাথার ব্যর্থী ভাই আপন ভগিনীটির তত্ত্ব লইতে আসিয়াছে,-° হৃদয়ের স্তরে স্তরে সঞ্চিত নিগুঢ় অশ্রুরাশি সে দিন আর কি বাধা মানিতে পারে! সেই ঘর সেই খেলা সেই বাপ মা সেই সুখশৈশব সমস্ত মনে পড়িয়া আর কি এক দণ্ড দুরন্ত উতলা হৃদয়কে বাৰিয়া রাখা যায় । সে দিন কিছুতে আর একটি মাসের প্রতী ক্ষা ও প্রাণে সহিতে ছিল না—বিশেষতঃ,সেদিন নদীর ওপার নিবিড় মেঘে কালো হইয়া আসিয়াছিল, বৃষ্টি ঝম্ঝম্ করিয়া পড়িতেছিল, ইচ্ছা হইতেছিল বর্ষার বৃষ্টিধারামুখরিত, মেঘচ্ছায়াস্যামল, কুলে কুলে পরিপূর্ণ অগাধ শীতল নদীটির মধ্যে ঝাপ দিয়া পড়িয়া এখনি হাড়ের ভিতরকার জালাটা নিবাইয়া আসি —ইহার মধ্যে একটি ব্যাকরণের ভুল আছে, সেটিকে বঙ্গভাষার সতর্ক অভিভাবকগণ মার্জনা করিবেন, এমন কি, তাহার উপরেও একবিন্দু অশ্রুপাত করিবেন! ভাইয়ের প্রতি “গুণবতী” বিশেষণ প্রয়োগ করিয়া উপরোক্ত অজ্ঞাতনাম্নী কস্তাটি অপরিমেয় মূর্খতা প্রকাশ করিয়া ছিল ! সে হতভাগিনী স্বপ্নেও জানিত না তাহার সেই একটি = দিনের মৰ্ম্মভেদী ক্ৰন্দনধ্বনির সহিত এই ব্যাকরণের ভুলটুকুও । জগতে চিরস্থায়ী হইয়া যাইবে । জানিলে লজ্জায় মরিয়া যাইত ! – হয় ত ভুলটি গুরুতর নহে ; হয় ত ভগিনীকে সম্বোধন করিয়া কথাটা বলা হইতেছে এমনও হইতে পারে। সম্প্রতি যাহারা বঙ্গভাষার বিশুদ্ধিরক্ষাত্রতে ভাষাগত প্রথা এবং পুরাতন সৌন্দৰ্য্যগুলিকে বলিদান করিতে উদ্যত হইয়াংছন ভরসা করি তাহারাও
* ---- -
- ---
-- মেয়েলি ছড়া । । E মাঝে মাঝে স্নেহবশতঃ আত্মবিস্তুত হইয়া ব্যাকরণ লঙ্ঘনপূৰ্ব্বক ভগিনীকে ভাই বলিয়া থাকেন, এমন কি, পত্নীশ্রেণীর সম্পর্কের দ্বারা প্রীতিপূর্ণ ভ্রাতৃসম্বোধনে অভিহিত হইলে তৎক্ষণাৎ তাহাদের ভ্রম সংশোধন করিয়া দেন না ! আমাদের বাঙ্গলা দেশের এক কঠিন অন্তবেদন আছে— মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো । অপ্রাপ্তবয়স্ক অনভিজ্ঞ মূঢ় কন্যাকে পরের ঘরে যাইতে হয়, সেইজন্য বাঙ্গালী কন্যার মুখে সমস্ত বঙ্গদেশের একটি ব্যাকুল করুণ দৃষ্টি নিপতিত রহিয়াছে। সেই সকরুরণ কাতর স্নেহ বাঙ্গলার শারদোৎসবে স্বৰ্গীয়তা লাভ করিয়াছে। আমাদের এই ঘরের স্নেহ ঘরের দুঃখ, বাঙ্গালীর গৃহের এই চিরন্তন বেদন হইতে অশ্ৰুজল আকর্ষণ করিয়া লইয়৷ বাঙ্গালীর হৃদয়ের মাঝখানে শারদোৎসব পল্লবে ছায়ায় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইহা বাঙ্গালীর অম্বিক পূজা এবং বাঙ্গালীর কন্যাপূজাও বটে। আগমনী এবং বিজয়ী বাঙ্গলার মাতৃহৃদয়ের গান। অতএব সহজেই ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে যে, আমাদের ছড়ার মধ্যেও বঙ্গজননীর এই মৰ্ম্মব্যথা নানা আকারে প্রকাশ পাইয়াছে । আজ হুর্গার অধিবাস, কাল দুর্গার বিয়ে। দুর্গা যাবেন শ্বশুরবাড়ি সংসার কাদায়ে। মা কাদেন যা কাদেন ধূলায় লুটায়ে । সেই যে মা পলাকাটি দিয়েচেন গল সাজায়ে। বাপ কাদেন বাপ কঁাদেন দরবারে বসিয়ে । সেই যে বাপ টাকা দিয়েছেন সিন্ধুক সাজায়ে ॥ মাসি কাদেন মাসি কাদেন হেঁসেলে বসিয়ে। সেই যে মাসী ভাত দিয়েছেন পাথর সাজিয়ে ॥