পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 সাধনা। তেছে। লঘুকায় বন্ধনবিহীন মেঘ আপন লঘুত্ব এবং বন্ধনবিহীনতা গুণেই জগদ্ব্যাপী হিতসাধনে স্বভাবতই উপযোগী হইয়া উঠিয়াছে। এবং ছড়াগুলিও ভারহীনতা, অর্থবন্ধনশূন্যতা এবং চিত্রবৈচিত্র্যবশতই চিরকাল ধরিয়া শিশুদের মনোরঞ্জন করিয়া আসিতেছে – অথচ শিশু মনোবিজ্ঞানের কোন স্বত্র সম্মুখে ধরিয়া রচিত হয় না। • আজকাল বঙ্গদেশে স্পষ্টতঃ উদ্দেশ্য অবলম্বন করিয়া সাহিত্য রচনার প্রাদুর্ভাব অধিক দেখা যায়। তাহার একটা কারণ এই যে, বাঙ্গালীর অন্য অনেক সভ্যজাতি হইতে, আনন্দের অপেক্ষ প্রয়োজনসাধনকেই অধিক গৌরব দিয়া থাকেন। তাহার ফল হয়, আনন্দেরও হ্রাস হয় বৃহৎ প্রয়োজনও সিদ্ধ হয় না। তাহারা যদি ক্রমাগতই কাব্য হইতে নীতি ও তত্ত্ব অন্বেষণ করিতে চেষ্টা করেন তবে তাহদের ফরমাস অনুসারে এমন কাব্য রচিত হয় যাহাতে কাব্যসৌন্দৰ্য্য উপেক্ষিত হইতে পারে অথচ তত্ত্ব ও নীতির স্বম্পষ্ট বিকাশ হয় না। এবং সেই সকল উদ্দেশ্যকৃত রচনা কখনই স্থায়ী এবং ব্যাপক হইতে পারে না। মেঘ কেবল বারিবর্ষণ করে না,-ছাত্মা দেয়, রং ফলায়, নানা অপরূপ সুন্দরমূৰ্ত্তি ধারণ করে। সেগুলি তাহার মুখ্য উদ্দেশ্যের পক্ষে নিতান্তই অনাবশ্যক। বারিবর্ষণই যদি তাহার উদেহু এবং তত্ত্ব হইত তবে এত আড়ম্বর আয়োজন না করিয়া একটা বড় আকারের দমকল নিৰ্ম্মাণ করিলেও চলিত। অধুনা অনেক গদ্য ও পদ্য-কাব্য সেইরূপ আপনার কাব্যকলা ও কল্পনার সীমাকে দমকলের মুখের মত সঙ্কীর্ণ করিয়া প্রবলবেগে উদ্দেশ্যধারা বর্ষণ করিতে থাকেন –তাহাতে যন্ত্রনৈপুণ্য, বুদ্ধিকৌশল এবং সাধু ইচ্ছা থাকিতে পারে কিন্তু তাহী ক্ষণস্থায়ী এবং প্রাদেশিক, তাহাতে ছায়া, বর্ণ, রূপ এবং আনন্দের পরিমাণ স্বল্পতর। - Hi মেয়েলি ছড়া । 8 ዓo উপনিষদে আছে “ভূমৈব স্থখং, নামে মুখমস্তি ” ভূমাই সুখ, অল্পে স্থখ নাই। উদ্দেশ্য যত বড়ই হোঁকু দেশে কালে পাত্রে তাহ সীমাবদ্ধ সুতরাং তাহা অল্প—যথার্থ " সৌন্দর্য্যের সীমা নাই—তাহা ভুমা—তাহ সৰ্ব্বকালে সৰ্ব্বলোককে সমান আনন্দদান করিয়া আসিতেছে,অথচ এখনও তাহার অন্ত হইল না। উদ্দেশ্যের আনন্দের নিকট প্রেমের ও সৌন্দর্য্যের আনন্দকে যাহারা নিম্নাসন দিয়া থাকেন তাহদের দ্বারাও পৃথিবীর অনেক হিতসাধন হইতে পারে কিন্তু কাব্য র্তাহীদের অধিকার-বহির্ভূত । দুর্ভাগ্যক্রমে তাহদের দ্বারা অনেক অহিতও হইয়া থাকে। কারণ, হিতসাধনের উৎসাহে তাহারা অনেক স্থলে বলপুৰ্ব্বক অনধিকার প্রবেশ করিয়া থাকেন। ছেলেদের জন্ত গ্রন্থরচনা ও গ্রন্থনিৰ্ব্বাচন তাহার অন্যতম দৃষ্টান্ত । জগতে অতি সত্বরেই নীতি ও তত্ত্ব প্রচারের অধৈৰ্য্যে তাহার ছেলে-ভুলানে কাল্পনিক কথাগুলাকে সম্পূর্ণ নিৰ্বাসিত করিয়া দিয়া নিরতিশয় আবশ্বকীয় শুদ্ধ সত্য এবং উপদেশকে গ্রীষ্মমধ্যান্ত্রে জলসংযোগরহিত ছাতুর মত পিণ্ডাকার করিয়া গিলাইতে চেষ্টা করিতেছেন। কিন্তু জননী সরস্বতী ত আমাদের বিমাতা নহেন। অক্ষম অবস্থায় তিনি আমাদের প্রতি কোনরূপ নিষ্ঠর ব্যবহার করেন নাই। আমরা যখন শিশু ছিলাম তখন আমাদের জন্য তাহার স্তনে ক্ষীরধারা নিঃস্থত হইয়াছিল—তাহা এই ছড়া এবং রূপকথা,— তাহ কোন বুদ্ধিমানের উদেহুকত স্বহস্তরচিত নহে, তাহ মাতৃমেহের অনন্ত প্রস্রবণ হইতে স্বতঃ-উৎসারিত অমৃতধারা। সমালোচক এবং পণ্ডিতমণ্ডলীর প্রতি সবিনয় নিবেদন এই যে, উনবিংশ শতাব্দীর শত শত আবিষ্কার ও উদ্ভাবনার মধ্যে এ পর্য্যন্ত বালকবালিকাদের জন্ত স্নেহময়ী জননীর পরিবৰ্ত্তে কোন নিয়মময় on