পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৭৮ . সাধনা ৷ সামনের মুখে সেইরূপ ভাবে চোপ্ত আঁকা হইয়াছে। মিসরদেশের প্রাচীন প্রাচীর-চিত্র সকল এই ধরণের। প্রথম ছবিটি, আনন্দ মগ্ন একজন ব্রাহ্মণের প্রতিমূৰ্ত্তি। ভূমিতলে উপবিষ্ট ; দেহ, উদরের নিম্নদেশ পৰ্য্যন্ত মগ্ন ; বক্ষদেশ উদার ও কোমল ; আসনবদ্ধ পদদ্বয়ের উপর অঞ্জলবিদ্ধ হস্থ স্থাপিত ; গলায় উপবীত ; ভূতলে দৃষ্টি নিবদ্ধ। মস্তক মুণ্ডিত ; গুরুতার ললাট ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে—তাহাতে তিনটি কশিবৎ রেখা ; গোপ সাদা ও ঘন ; চক্ষু অৰ্দ্ধ-নির্মালিত। এই মূৰ্ত্তিতে কিছুমাত্র প্রাচ্য ভাব নাই— ইহা একজন জৰ্ম্মন অধ্যাপকের মূৰ্ত্তি হইলেও হইতে পারিত। কেবল, মস্তকের গঠন অত্যন্ত বৃহৎ এবং মুখ মণ্ডলে একটি প্রশান্ত ভাব দীপ্যমান। দেখিয়া মনে হয়, বহুকাল হইতে এই ব্যক্তি ধ্যানে মগ্ন, বাহ কোলাহলের প্রতি উদাসীন — আর কখন বুঝি জাগ্রত হইবে না। চারিপাশে হরিৎ-বর্ণের তরঙ্গবিস্তার ও তাহার শেষে আকাশের রক্তিমরাগ পরিস্ফুট। বিস্তীর্ণ অসীম প্রান্তরের মধ্যে একটিমাত্র মানব একাকী অবস্থিত। দ্বিতীয় ছবিটি আরও স্বন্দর—রক্তিম রাগে ও কনক-বর্ণচ্ছটায় সমস্ত বিভাসিত। অরণ্যের মধ্যে তাল বৃক্ষতলে একজন ব্রাহ্মণ বিশ্রাম উপভোগ করিতেছে। বদ্ধাসন হইয়া গালিচার উপর উপবিষ্ট—হরিদ্রাবর্ণের কেীপীন পরিধান— প্রথম মূৰ্ত্তিটির অপেক্ষ স্থল দেহ–উহারই স্থায় থস্থসে কোমল শরীর—উদরটি গৌরবর্ণ গোলাকার—গদির উপর যেরূপ থাক্‌ পড়ে, উহার উদরে সেইরূপ কতকগুলি থাক্ পড়িয়াছে। মুখখানি তত বিষন্ন নহে—ধ্যানভারে ভারাক্রান্ত নহে-পরন্তু একটি প্রশান্ত আনন্দের ভাব তাহাতে বিভাসিত । একটি নগ্ন বাহু লাল রঙ্গের ঝুলির মধ্যে প্রবিষ্ট্র ও প্রচ্ছন্ন—তাহার মধ্যে অঙ্গুলী-মুদ্রার সাধনা চলিতেছে—আর একটি ভারতবর্ষে । হস্তের দুইটি অঙ্গুলী দ্বারা একটা সাদা পদ্ম অতি সন্তৰ্পণে ধৃত । প্তাহার মস্তকের চতুর্দিকে কিরণচ্ছটা, তাহাতে বুঝা যাইতেছে, এই মহাত্মা ভাবী পুনর্জন্ম হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়াছেন – ব্রহ্মের মধ্যে বিলীন হইয়াছেন। পদতলে, ইহার একজন শিষ্য, নবদীক্ষিত ব্যক্তির উপযুক্ত শুভ্ৰবসন পরিধান করিয়া, ভক্তিভাবে, কৃতাঞ্জলি ও নতজানু হইয়া, ইহার উপদেশ শ্রবণ করিতেছে। এই হরিদ্বর্ণ তালকুঞ্জ-বিরচিত গম্বুজের নীচে বসিয়া এই সাধু না জানি। কি গম্ভীর ও গভীর তত্ত্বের উপদেশ দিতেছেন ! এই সকল উপদেশের কথা উপনিষদে অাছে। আজ সায়াহ্লে, উপনিষদ গ্রন্থগুলি ঘাটিয়া এই দুইটি ছবির মৰ্ম্মাৰ্থ বুঝিলাম। প্রথম ছবিটি ধ্যানমগ্ন ব্রাহ্মণের প্রতিমূৰ্ত্তি—দ্বিতীয় ছবিটির বিষয়—গুরুশিষ্যের মধ্যে কথোপকথন । - ভূমি অভিমুখে স্বীয় বিশাল ললাট অবনত করিয়া অৰ্দ্ধনিমীলিত নেত্রে এই বিজনবাসী সাধু এইরূপ ধ্যান করিতেছেন— হরিঃ ওঁ ! এই জ্যোতি, যাহা এই আকাশকে অতিক্রম করিয়া প্রকাশ পাইতেছে-যাহ সুৰ্ব্বাপেক্ষ উচ্চ—যাহা উন্নততম লোকে অবস্থিত—যাহার পরে আর কোন লোক নাই—সেই এই জ্যোতি মন্থয্যের আত্মাতেও দীপ্যমান। সকল পদার্থই ব্ৰহ্ম। আমি সেই দৃপ্তমান জগৎকে ধ্যান করি, ব্রহ্মে যাহার আরম্ভ, ব্রহ্মে যাহার শেষ, ব্রহ্মেতেই যাহার প্রাণ । এই জ্ঞান স্বরূপ, আত্মাই যাহার দেহ, জ্যোতিই র্যাহার আকার, সত্যই র্যাহার চিন্তা—যাহার স্বরূপ আকাশের স্থায়, যিনি সৰ্ব্বব্যাপী ও অদৃশ্য ; যাহা হইতে সকল কামনা, সকল স্বগন্ধ নিঃস্থত হইতেছে, যিনি সকল পদার্থকে আবৃত করিয়া আছেন, তিনি বাক্য মনের অগম্য। , H .