শুক হয় নাই। যেন রেলপথের মাঝে মাঝে এমন এক আধট ব্রিজ আছে যাহা পুরা মজবুত বলিয়া বোধ হয় না—কিন্তু চালক তাহার উপর দিয়া এমন দ্রুত গাড়ি লইয়া চলে যে, ব্রিজ ভাঙ্গিয়৷ পড়িবার অবসর পায় না। । - এমন হইবার কারণও স্পষ্ট পড়িয়া রহিয়াছে। যখন বৃহৎ সৈন্যদল যুদ্ধ করিতে চলে তখন তাহারা সমস্ত ঘরকরন কাধে করিয়া লইয়া চলিতে পারে না। বিস্তর আবশুক দ্রব্যের মায়াও তাহাদিগকে ত্যাগ করিতে হয়। চলৎশক্তির বাধা তাহাদের পক্ষে মারাত্মক। গৃহস্থ মানুষের পক্ষে উপকরণের প্রাচুর্য্য এবং ভার বাহুল্য শোভা পায়। - - রাজসিংহের গল্পটা সৈন্যদলের চলার মত—ঘটনাগুলা বিচিত্র ব্যুহরচনা করিয়া বৃহৎ আকারে চলিয়াছে। এই সৈন্যদলের নায়ক যাহারা তাহারাও সমান বেগে চলিয়াছেন, নিজের সুখদুঃখের খাতিরে কোথাও বেশিক্ষণ থামিতে পারিতেছেন না । একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। রাজসিংহের সহিত চঞ্চলকুমারীর প্রণয়ব্যাপারটা তেমন ঘনাইয় উঠে নাই বলিয়া কোন কোন পাঠক এবং সম্ভবতঃ বহুসংখ্যক পাঠিক আক্ষেপ করিয়া থাকেন। বঙ্কিম বাবু বড় একটি দুর্লভ, অবসর পাইয়াছিলেন—এই স্থযোগে কন্দপের পঞ্চশরে এবং করুণরসের বরুণবাণে দিগ্বিদিক সমাকুল করিয়া তুলিতে পারিতেন। - কিন্তু তাহার সময় ছিল না। ইতিহাসের সমস্ত প্রবাহ তখন একটি সঙ্কীর্ণ সন্ধিপথে বজস্তনিতরবে ফেনাইয়া চলিতেছিলতাহারই উপর দিয়া সামাল সামাল তরী ! তখন রহিয়৷ বসিয়া ইনিয়া বিনিয়া প্রেমাভিনয় করিবার সময় নহে। അ তখনকার যে প্রেম, সে অত্যন্ত বাহুল্যবর্জিত সংক্ষিপ্ত সংহত বস্তার একটি গৰ্ব্বোদ্ধত প্রবল তরঙ্গের ন্যায় দিল্লির সিংহাসনে গিয়া রাজসিংহ । ৪১১ সে বাসররাত্রের মুখশয্যার বাসন্তী প্রেম নহে-ঘন বর্ষার কালরাত্রে মৃত্যু হঠাৎ পশ্চাৎ হইতে আসিয়া দোলা দিয়াছে-মান অভিমান লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়া ত্ৰস্ত নায়িকা চকিত বাহুপাশে নায়ককে বাধিয়া ফেলিয়াছে। এখন সুদীর্ঘ সুমধুর ভূমিকার সময় কোথায় ছিল ক্ষুদ্র রূপনগরের অন্তঃপুরপ্রান্তে একটি বালিকা,— কালক্রমে সে কোন ক্ষুদ্র রাজপুত নৃপতির শত রাজ্ঞীর মধ্যে অন্যতম হইয়া অসম্ভব-চিত্রিত লতার উপরে অসম্ভব-চিত্রিত পক্ষীখচিত শ্বেতপ্রস্তররচিত কক্ষপ্রাচীর মধ্যে পুরু গালিচায় বসিয়া রঙ্গসঙ্গিনীগণের হাসিটর্টকারী পরিবৃত হইয়া আলবোলায় তামাকু টানিত, সেই পুষ্পপ্রতিমা সুকুমার সুন্দর বালিকাটুকুর মধ্যে কি এক দুৰ্ব্বার দুৰ্দ্ধৰ্ষ প্রাণশক্তি জাগ্রত হইয়া উঠিল সে আজ বাধমুক্ত আঘাত করিল। কোথায় ছিল মোগল রাজপ্রাসাদের রত্নখচিত রঙমহালে সুন্দরী জেব্উন্নিসা—সে সুখের উপর সুখ, বিলাসের উপর বিলাস বিকীর্ণ করিয়া আপনার অন্তরাত্মাকে আরামের পুষ্পরাশির মধ্যে আচ্ছন্ন অচেতন করিয়া রাখিয়াছিল, সে দিনের সেই স্বত্বদোলায় হঠাৎ তাহার অন্তরশয্যা হইতে জাগ্রত হইয় তাহাকে কোন মহাপ্রাণী এমন নিষ্ঠুর কঠিন বাহুবেষ্টনে পীড়ন করিয়া ধরিল, সম্ৰাইছহিতাকে কে সেই সৰ্ব্বত্রগামী দুঃখের হস্তে সমর্পণ করিল ৷ বে দুঃখ প্রাসাদের রাজরাজেশ্বরীকেও কুটিরবাসিনী কৃষককার । সহিত এক বেদনাশয্যায় শয়ান করাইয়া দেয়। দস্থ্য মাণিকলাল । হল বীর, রূপমুগ্ধ মোবারক মৃত্যুসাগরে আত্মবিসর্জন করিল,
পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/১৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।