প্রাচীন সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থে প্রকৃতির প্রতি অনুরাগের সহিত সমস্ত জীবজগতের প্রতি একটি প্রগাঢ় সহানুভূতি দেখা যায়। গোথ, চক্রবাকমিথুন, কলহংস এবং মৃগশাবক সংস্কৃত সাহিত্যরাজ্যের একটি | সুবৃহৎ সামাজিকতার মধ্যে কেমন সুন্দর স্থান অধিকার করিয়া ! আছে—মানুষের সুখদুঃখ এবং দৈনন্দিন ঘটনার মধ্যে তাহারা কেমন সহজে অবাধে বিচরণ করিয়া বেড়ায়, তাহারা আমাদের যেন পর নহে, ঘরের লোকের মত। পাশ্চাত্য সাহিত্যে পশু জাতির প্রতি মমতা ব্যক্ত হয় নাই একথা বলিলে নিতান্তই অত্যুক্তি হইয়া পড়ে। ইছরকে সম্বোধন করিয়া কবি বার্ণসের যে করুণান্দ্র বাৎসল্যপূর্ণ কবিতাটি আছে তাহার তুলনা অন্য দেশের কোন কবিতায় পাওয়া যায় কি না সন্দেহ। সংস্কৃত সাহিত্যে ত দেখা যায় না । . . - কিন্তু আমার বিবেচনায় না থাকিবার একটি কারণ আছে। কবি বার্ণসের যে কবিজন-সুলভ মমত্ব, তাহ যেন চতুদিকের নির্দয়তার নিপীড়নে কিছু সচেতন বেগে উৎসারিত হইয়া উঠিয়াছে। তিনি জানেন এই অসহায় জীবকে কেহ দয়ার চক্ষে দেখে না, তিনি জানেন অকারণে খেলাচ্ছলে পশুহত্যা মানুষের আমোদের একটা অঙ্গ হইয়া গেছে, সেই জন্য চতুর্দিক হইতে বাধা এবং ব্যথা প্রাপ্ত হইয় তাহার দয়া এমন প্রবলভাবে স্নেহসঙ্গীতে পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে । , - - ংস্কৃত সাহিত্যে কবিহীদয়ের দয়া চতুৰ্দ্দিকের সমাজ কর্তৃক সেই , 羈, বেদন প্রাপ্ত হয় নাই, এই জন্য তাহ উচ্ছসিত গীত্বে পরিণত | হইতে পারে নাই, তাহ কেবল একটি আত্মবিস্তৃত অচেতন গেংে সহজ প্রেমে যেন এক গার্হস্থ্যের অঙ্গ হইয়া বিরাজ করিতেছে। হইয়া আছে। প্রকৃতি, পশু এবং মানব একটি প্রাচীন ভারতবর্ষে যে মৃগয়া ছিল না তাহা নহে, কিন্তু ক্রীড়ার্থে পশুহনন কেবল রাজাদের মধ্যে বৃদ্ধ ছিল—সাধারণ হিন্দুপ্রকৃতির সহিত উক্ত কাৰ্য্যের যেন একটা অসামঞ্জস্য ছিল। সেই জন্ত মৃগয়ায়। —অন্য দেশের কবি যেখানে অশ্বের হেযারবে ও কুকুরগণের উল্লাস কোলাহলে উৎসাহিত হইয়া শোণিতাক্তকলেবর পলায়মান পশুর পশ্চাতে জয়োল্লাসে ধাবমান হয়েন-সংস্কৃত কবির করুণ হৃদয় সেই প্রাণভয়ে পলায়মান আর্তের দুঃখে বিগলিত হইয়া আসে এবং তাহার শিকারদুগু উল্লাসের পরিবর্তে করুণাই উদ্রেক করে । কাদম্বরীর প্রারম্ভেই ইহার একটি স্বন্দর দৃষ্টান্ত আছে। শুকমুখে । বাণভট্ট যেখানে ব্যাধগণের অত্যাচার উপদ্রবের বর্ণনা করিয়াছেন, সেখানে তাহার এই সহৃদয়ত, পশুজগতের প্রতি— অহিংসা মাত্র নহে –আন্তরিক নিবিড় অনুরাগ বর্ণনার পর বর্ণনায় প্রতি ছোটখাট ঘটনার উল্লেখে কেমন প্রগাঢ় হইয়া ফুটিয়াছে। সেই যমদূতসদৃশ বিকটমূৰ্ত্তি জবালোহিতচক্ষু নিষ্ঠুর শবরসেনা, নরকের দ্বারপালসদৃশ ভীষণ সেনাপতি, প্রাণভয়ে পলায়মান সিংহ । মাতঙ্গ কুরঙ্গগণের গর্জন ও চীৎকারে আলোড়িত বনরাজি, জরচ্ছবরের নৃশংস পক্ষীবধব্যাপার ও নিরীহ পক্ষীকুলের অন্তরে দারুণ ভাতিসঞ্চার, প্রতি বর্ণনায় বাণভট্টের অন্তর হইতে বাণবিদ্ধ হরিণের ইমি, পাশবদ্ধ পক্ষীশাবকের দ্যায় একটি করুণ আৰ্ত্তনাদ বাহির হইয়াছে, যে করুণ স্বরে ব্যাধগণের সমস্ত উল্লাসকোলাহল ডুবিয়া গিয়াছে। . . . কাদম্বরীর গ্রন্থকার যে অধিক হা হুতাশ করিয়াছেন তাহা নহে, । * গরাক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া অহিংসার মাহাত্ম্য সম্বন্ধে দীর্ঘ ।
পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/১৯৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।