বারে ওলটপালট হইয়া গিয়াছে। মনে হয় যেন এমন একটা দেশে আসিয়াছি যেখানে মানুষ পায়ে না হাটিয়া মাথায় হাটে। এই মানবজাতি যেরূপে চিন্তা করে, অনুভব করে, জীবনযাত্র নির্বাহ করে তাহ সম্পূর্ণ আমাদের বিপরীত—আমাদের ভাবের সঙ্গে আদেী মিশ খায় না। কাশীতে আসিয়া মনে হয়, যেন খেয়াল পাচটার সময় উঠিলাম, সাড়ে ছটার সময় নদীর ধারে উপনীত হইলাম। প্রভাতের তরুণ আলোকে দিগন্ত পৰ্য্যন্ত সমস্ত স্থান তরল রজতবৎ শুভ্রকান্তি। বৃহৎ গঙ্গা নিজ শু্যামল বক্ষ উদঘাটন করিয়া, কর্দমময় ভাঙ্গা ভাঙ্গ তরঙ্গলহরী বিস্তার করিয়া দুই কুলের মধ্য দিয়া চলিয়াছে। একদিকে বালুকাময় বিস্তীর্ণ মরু—আর একদিকে মন্দির প্রাসাদ মসজিদ, মৰ্ম্মর-প্রস্তরের প্রাচীর – যাহার রেখাস্বত্র গোলাবী কুয়াশার গভীরতম দেশে ক্রমশ মিলাইয়া গিয়াছে। ঘাটের প্রশস্ত ধাপসকল উদারভাবে নদী পৰ্য্যন্ত নামিয়াছে এবং স্বৰ্য্যালোকে ঝক ঝক করিতেছে। এইখানে হিন্দুদিগের ভীড়। যাত্রী, পুরোহিত, ভক্তের দল সবাই প্রভাতিক অৰ্চনা সমাধা করিবার জন্য–উদীয়মান স্বৰ্য্যকে ও গঙ্গাদেবীকে পূজা দিবার জন্য এখানে সমাগত। সহস্ৰ সহস্ৰ লোক। গৌরবর্ণ ব্রাহ্মণের—ত্রিবলীশোভিত লম্বোদরদীপ্তিমান মুণ্ডিত মস্তক—বৃহৎ বৃহৎ তৃণাচ্ছাদিত ছত্র-তলে, প্রস্তরফলকের উপর উপবিষ্ট হইয়। পথিকদিগের নিকট শাস্ত্র হইতে শ্লোক পাঠ করিতেছে। শু্যামবর্ণ শূদ্রের মুণ্ডিতমস্তক, কেবলমাত্র অল্প এক গুচ্ছ কেশ ঘাড়ের দিকে লম্বমান—অৰ্দ্ধ নগ্ন চটুল দেহ। স্ত্রী লোকের উজ্জ্বল রঙ্গের কাপড়ে আপাদমস্তক আচ্ছাদিত। তাহার দাড়াইয়া সূর্য্যের দিকে বাহু উত্তোলন করিয়া করযোড়ৈ পূজা করিতেছে। যতই আমাদের নৌকা জলের উপর অগ্রসর হইতে مینماییم هسمیه --ళైష్ణో ভারতবর্ষে। । লাগিল ততই মন্দির ও লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। চারি শত ফুট প্রশস্ত বড় বড় সোপানশ্রেণী প্রকাণ্ড পিরামিডের ন্যায় উৰ্দ্ধে উঠিয়াছে, তাহদের সহস্ৰ সহস্র ধাপ—সেই ধাপসমূহের সমান রেখাপাত । গুরুভার অষ্টকোণ স্তম্ভসকল জলমধ্যে নিমগ্ন ; হৰ্ম্ম-শ্রেণীর চৌকোন সন্মুখভাগ—লালপাথরে ফুলকাটা বড় বড় চুড়া-মাৰ্ব্বলের ভিতর খোদা কুলঙ্গি সকল একটার পর একটা দৃষ্টিপথে আসিতেছে। পুরাতন মিসরের ন্যায়, আসিরিয়ার পৌরাণিক নগরের ন্যায় এখানে পাথরের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড স্ত,প, জ্যামিতিক গঠন প্রণালী অনুসারে উপযুপিরি ন্যস্ত। এই সকল অট্টালিকার নিয়ে বহুপুরাতন নদীর ধারে শতসহস্র হিন্দু গতিবিধি করিতেছে— ধৰ্ম্মানুষ্ঠান করিতেছে । - . চারি ঘণ্টা ধরিয়া আমি নদীর উপর নৌকা করিয়া যাতায়াত করিলাম—এই সকল অশেষ বিচিত্রতা—আকার ও ভঙ্গীর অনন্ত তরঙ্গ আমি কি করিয়া বর্ণনা করিব ? আলোক-ধবল প্রশস্ত ধাপের উপর –বাধা পোস্তার ধারে—ভগ্নাবশিষ্ট মন্দিরের রাশীকৃত প্রস্তরের উপর—আরও উচ্চে গবাক্ষের উপর-প্রকাণ্ড প্রস্তরস্ত,পের ছাদে– তৃণময় ছত্রারণ্যের তলে—শু্যামল দেহসকল পিলপিল করিতেছে— বিচিত্র রঙ্গের বুদ্ধ,দ যেন ভাসিতেছে। পাচটি নগ্নদেহ একটা থামের উপর হইতে এক লম্ফে জলে বাপ দিয়া পড়িল—জলকণার স্ফুলিঙ্গ । উচ্ছসিত হইয়া উঠিল। ェ. -・・ তাহদের পশ্চাতে ব্রাহ্মণের বিড় বিড় করিয়া মন্ত্র পাঠ করিতে করিতে বৃক্ষশাখা আস্ফালন করিয়া জলে ক্রমাগত আঘাত করিতেছে। আরও নীচে, গম্ভীর ও উন্নতকায় স্ত্রীলোকের জল হইতে । উঠতেছে—সিক্ত নীল সাড়ী হইতে টস্টস করিয়া জল পড়িতেছে। গনতা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া, লোহিত পট্টবস্ত্রে আবৃত হইয়া, শাস্ত্রান্ত ।
- **