নিজের বিশেষ কৃতজ্ঞতাঋণ স্বীকার করিবার জন্য আবেগ উপস্থিত হয় এবং তাহ দমন করা অবশু কৰ্ত্তব্য বলিয়া বোধ করি না। সৌভাগ্যক্রমে আমরা বাল্যকালে বাঙ্গলাভাষায় বিদ্যাশিক্ষা লাভ করিয়াছিলাম। স্বল্প ইংরাজি যাহা শিখিতাম তাহার মধ্য হইতে হৃদয়ের পোষণযোগ্য তৃপ্তিজনক কোন রস আকর্ষণ করি রাম দাস, একত্র বাধানে বিবিধার্থসংগ্রহ, আরব্য উপন্যাস, পারস্য উপন্যাস, বাঙ্গলা রবিনসন ক্রুশো, সুশীলার উপাখ্যান, রাজা প্রতাপাদিত্য রায়ের জীবনচরিত, বেতাল পঞ্চবিংশতি প্রভৃতি তখনকার কালের গ্রন্থগুলি বিস্তর পাঠ করিয়াছিলাম। তখন বাঙ্গল গ্রন্থের সংখ্যা অল্প ছিল এবং বালকদিগের পাঠের অযোগ্য গ্রন্থও অনেক বাহির হইত। এবং আমরা অপরিতৃপ্ত আগ্রহের সহিত ভালমন্দ সকল গ্রন্থই নিৰ্বিচারে পাঠ করিতাম। তরুণ হৃদয়ের সেই স্বাভাবিক ক্ষুধা উদ্রেকের সময় বঙ্কিমের নবীনা প্রতিভা লক্ষ্মীরূপে সুধাভাও হস্তে লইয়া আমাদের সম্মুখে - আবিভূত হইলেন। তখন যে নুতন আস্বাদ, নূতন আনন্দ, নুতন জীবন লাভ করিয়াছিলাম তাহ কোন কালে ভুলিতে পারিব না। তখনকার বয়স্ক লোকের বঙ্কিমের রচনাকে কিরূপভাবে অভ্যর্থনা করিয়াছিলেন তাহার ইতিহাস সম্পূর্ণ মনে নাই। যেটুকু মনে পড়ে তাহাতে বোধ হয় বঙ্কিমকে বিস্তর উপহাস বিদ্রুপ গ্লানি সহ্য করিতে হইয়াছিল। তাহার উপর এক দল লোকের স্বতীব্র বিদ্বেষ ছিল। এবং ক্ষুদ্র যে লেখকসম্প্রদায় তাহার অনুকরণের বৃথা চেষ্টা করিত তাহারাই আপন ঋণ গোপন করিবার প্রয়াসে তাহাকে সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক গালি দিত। . আবার এখনকার যে নুতন পাঠক ও লেখক সম্প্রদায় উদ্ভূত | - বার ক্ষমতা ছিল না। অথচ তৃষ্ণ যথেষ্ট ছিল। কৃত্তিবাস, কাশি - বঙ্কিমচন্দ্র। is হইয়াছেন তাহারাও বঙ্কিমের পরিপূর্ণ প্রভাব হৃদয়ের মধ্যে অনুভব । করিবার অবকাশ পান নাই। র্তাহারা বঙ্কিমের গঠিত সাহিত্যভূমিতেই একেবারে ভূমিষ্ঠ হইয়াছেন, বঙ্কিমের নিকট যে তাহারা কতরূপে কতভাবে ঋণী তাহার হিসাব বিচ্ছিন্ন করিয়া লইয়া তাহারা দেখিতে পাইতেছেন না। - * কিন্তু আমাদের সহিত যখন বঙ্কিমের প্রথম সাক্ষাৎকার হয় । তখন সাহিত্য প্রভৃতি সম্বন্ধে কোনরূপ পূৰ্ব্বসংস্কার আমাদের - মনে বদ্ধমূল হইয়া যায় নাই এবং বর্তমান কালের নুতন ভাবপ্রবাহও আমাদের নিকট অপরিচিত অনভ্যস্ত ছিল। তখন বঙ্গ- । সাহিত্যেরও যেরূপ প্রাতঃসন্ধ্যা উপস্থিত আমাদেরও সেইরূপ বয়ঃ- । সন্ধিকাল। বঙ্কিম বঙ্গসাহিত্যে প্রভাতের স্বৰ্য্যোদয় বিকাশ করি- লেন, আমাদেরও হৃদপদ্ম সেই প্রথম - উদঘাটিত হইল। পূৰ্ব্বে কি ছিল এবং পরে কি পাইলাম তাহ আনলউচ্ছাসের সহিত আমরা এক মুহূৰ্ত্তেই অনুভব করিতে পারিলাম। ছুই কালের সন্ধিস্থলে যাহারা না দাড়াইয়াছে তাহারা সেই প্রবল । প্রভেদ কিছুতেই অনুমান করিতে পরিবে না। কোথায় গেল সেই - অন্ধকার,সেই একাকার,সেই সুপ্তি, কোথায় গেল সেই বিজয়বসন্ত, সেই গোলেবকাওলি, সেই সব বালকভুলানো কথা—কোথা হইতে আসিল এত আলোক, এত আশা, এত সঙ্গীত, এত বৈচিত্র্য! বঙ্গদশন যেন তখন আষাঢ়ের প্রথম বর্ষার মত “সমাগতো রাজবছন্নতধ্বনি।” এবং মুষলধারে ভাববর্ষণে বঙ্গসাহিত্যের পূৰ্ব্ববাহিনী পশ্চিমবাহিনী সমস্ত নদী নির্বরিণী অকস্মাৎ পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়া ীেবনের আনন্দবেগে ধাবিত হইতে লাগিল। কত কাব্য নাটক উপন্যাস কত প্রবন্ধ কত সমালোচনা কত মাসিক পত্ৰ কত ।
সংবাদপত্র বঙ্গভূমিকে জাগ্রত প্রভাত কলরবে মুখরিত করিয়া । > -., - ".