ass সাধনা। " মাতৃভাষার বন্ধ্যাদশা ঘুচাইয়া যিনি তাহাকে এমন গৌরবশালিনী করিয়া তুলিয়াছেন তিনি বাঙ্গালীর যে কি মহৎ কি চিরস্থায়ী উপকার করিয়াছেন সে কথা যদি কাহাকেও বুঝাইবার আবশুক হয় তবে তদপেক্ষ দুর্ভাগ্য আর কিছুই নাই । , তৎপূৰ্ব্বে বাঙ্গলাকে কেহ শ্রদ্ধাসহকারে দেখিত না । সংস্কৃত পণ্ডিতেরা তাহাকে গ্রাম্য এবং ইংরাজি পণ্ডিতেরা তাহাকে বর্বর জ্ঞান করিতেন। বাঙ্গলা ভাষায় যে কীৰ্ত্তি উপার্জন করা যাইতে পারে সে কথা তাহদের স্বপ্নের অগোচর ছিল। এই জন্য কেবল স্ত্রীলোক ও বালকদের জন্য অনুগ্রহপূর্বক দেশীয় ভাষায় তাহার। - সরল পাঠ্যপুস্তক রচনা করিতেন। সেই সকল পুস্তকের সরলতা ও পাঠযোগ্যতা সম্বন্ধে র্যাহাদের জানিবার ইচ্ছা আছে তাহার। রেভেরও কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত পূৰ্ব্বতন এণ্টে সহপাঠ্য বাঙ্গল গ্রন্থে দন্তস্ফুট করিবার চেষ্টা করিয়া দেখিবেন। অসন্মানিত বঙ্গভাষাও তখন অত্যন্ত দীনমলিনভাবে কালযাপন । করিত। তাহার মধ্যে যে কতটা সৌন্দৰ্য্য কতটা মহিমা প্রচ্ছন্ন ছিল তাহ তাহার দারিদ্র্য ভেদ করিয়া স্ফৰ্ত্তি পাইত না। যেখানে মাতৃভাষার এত অবহেলা সেখানে মানবজীবনের শুষ্কতা শূন্তত দৈন্ত কেহই দূর করিতে পারে না। ペ - এমন সময়ে তখনকার শিক্ষিতশ্রেষ্ঠ বঙ্কিমচন্দ্র আপনার সমস্ত শিক্ষা সমস্ত অনুরাগ সমস্ত প্রতিভা উপহার লইয়া সেই উপেক্ষিত সঙ্কুচিত। দীনহীন বঙ্গভাষার চরণে সমৰ্পণ করিলেন। তখনকার কালে কি যে অসামান্ত কাজ করিলেন-- তাহা তাহারই প্রসাদে আজিকার দিনে আমরা সম্পূর্ণ অনুমান করিতে পারি না । তখন র্তাহ অপেক্ষা অনেক অল্পশিক্ষিত প্রতিভাহীনু ব্যক্তি ইংরাজিতে দুই ছত্র লিখিয়া অভিমানে স্ফীত হইয়া উঠিতেন। বঙ্কিমচন্দ্র । -686 ইংরাজি সমুদ্রে তাহারা যে কাঠবিড়ালীর মত বালির বাধ নিৰ্ম্মাণ করিতেছেন সেটুকু বুঝিবার শক্তিও তাহদের ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্র যে সেই অভিমান সেই খ্যাতির সম্ভাবনা অকাতরে পরিত্যাগ করিয়া তখনকার বিদ্বজ্জনের অবজ্ঞাত বিষয়ে আপনার সমস্ত শক্তি নিয়োগ করিলেন ইহা অপেক্ষ বীরত্বের পরিচয় আর কি হইতে পারে । সম্পূর্ণ ক্ষমতাসত্ত্বেও আপন সমযোগ্য লোকের উৎসাহ এবং তাহদের নিকট প্রতিপত্তির প্রলোভন পরিত্যাগ করিয়া একটি অপরীক্ষিত অপরিচিত অনাদৃত অন্ধকার পথে আপন নবীন জীবনের সমস্ত আশা উদ্যম ক্ষমতাকে প্রেরণ করা কত বিশ্বাস এবং কত সাহসের বলে হয় তাহা পরিমাণ কর আমাদের পক্ষে সহজ নহে । , - কেবল তাহাই নহে তিনি আপনার শিক্ষাগৰ্ব্বে বঙ্গভাষার প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করিলেন না, একেবারেই শ্রদ্ধা প্রকাশ করিলেন । যত কিছু অাশা আকাজক্ষা সৌন্দর্য্যপ্রেম মহত্ত্বভক্তি স্বদেশীনুরাগ—শিক্ষিত পরিণত বুদ্ধির যত কিছু শিক্ষালব্ধ চিন্তাজাত ধনরত্ন সমস্তই অকুষ্ঠিতভাবে বঙ্গভাষার হস্তে অৰ্পণ করিলেন। পরম সৌভাগ্যগৰ্ব্বে সেই অনাদরমলিন ভাষার মুখে সহসা অপূৰ্ব্ব লক্ষ্মী প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিল। তখন, পূৰ্ব্বে র্যাহারা অবহেলা করিয়াছিলেন তাহারা বঙ্গভাষার -যৌবনসৌন্দর্য্যে আকৃষ্ট হইয়া একে একে নিকটবৰ্ত্তী হইতে লাগি লেন। বঙ্গসাহিত্য প্রতিদিন গৌরবে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিতে লাগিল। বঙ্কিম যে গুরুতর ভার-লইঘাছিলেন তাহ অন্ত কাহারও পক্ষে ছঃসাধ্য হইত। প্রথমতঃ, তখন বঙ্গভাষা যে অবস্থায় ছিল তাহাকে যে, শিক্ষিত ব্যক্তির সকল প্রকার ভাবপ্রকাশে নিযুক্ত করা যাইতে পারে ইহা বিশ্বাস ও আবিষ্কার করা বিশেষ ক্ষমতার কার্য্য।
পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/২৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।