«೬೦ - সাধন । আমাদের দেশে এখনও সেই কাৰ্য্যবিভাগের সময় আসে নাই—এবং বঙ্কিম যখন সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন তখন সেই সময় আরও স্থদুরবর্তী ছিল। সেই জন্য রচনা এবং সমালোচনা এই উভয় কাৰ্য্যই তিনি বীরের হার একাকী গ্রহণ করিলেন। এই দুষ্কর ব্রতানুষ্ঠানের যে ফল তাহাও তাহাকে ভোগ করিতে হইয়াছিল। মনে আছে, বঙ্গ-দৰ্শনে যখন তিনি সমালোচক পদে আসীন ছিলেন তখন তাহার ক্ষুদ্র শত্রুর সংখ্যা অল্প ছিল না । শত শত অযোগ্য লোক র্তাহাকে ঈর্ষা করিত এবং তাহার শ্রেষ্ঠত্ব অপ্রমাণ করিবার চেষ্টা করিতে ছাড়িত না । কণ্টক যতই ক্ষুদ্র হোক তাহার বিদ্ধ করিবার ক্ষমতা আছে। এবং কল্পনাপ্রবল লেখকদিগের বেদনাবোধও সাধারণের অপেক্ষ কিছু অধিক। ছোট ছোট দংশনগুলি যে বঙ্কিমকে লাগিত না তাহা নহে কিন্তু কিছুতেই তিনি কৰ্ত্তব্যে পরামুখ হন নাই। তাহার অজেয় বল, কৰ্ত্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিল। তিনি জানিতেন বৰ্ত্তমানের কোন উপদ্রব তাহার মহিমাকে আচ্ছন্ন করিতে পরিবে না,-- সমস্ত ক্ষুদ্র শক্রর ব্যুহ হইতে তিনি অনায়াসে নিস্ক্রমন করিতে পারিবেন। এই জন্ত চিরকাল তিনি অম্লানমুখে বীরদৰ্পে অগ্রসর হইয়াছেন, কোন দিন তাহাকে রথবেগ খৰ্ব্ব করিতে হয় নাই । - - বঙ্কিম যে দিন সমালোচকের আসন হইতে অবতীর্ণ হইলেন সে দিন হইতে এ পর্য্যন্ত আর সে আসন পূর্ণ হইল না। সাহিত্যের প্রতি এখনকার সমালোচনার কোন প্রভাব নাই। সাধারণে এখনকার সমালোচনা কেবল বিজ্ঞাপনস্তম্ভ সজ্জিত করিবার আয়োজন স্বরূপে দেখে। যথার্থ রসবোধ এবং স্বক্ষ বিচার প্রকাশ পায় এমন সমালোচনা বহুকাল দেখা যায় নাই। গ্রন্থ সমালোচনার ভার محمدج - سیم بندی. স্বাভাবিক বিচার শক্তির সহিত নিরপেক্ষ ভাবে দণ্ডপুরস্কার বিধান বঙ্কিমচন্দ্ৰ ৫৫১ -.، -یہ--- অনেক সময়ে অযোগ্য লোকের হস্তে ন্যস্ত হয় এবং অনেক কৃতবিদ্য লেখকও অত্যুক্তি, কাল্পনিকতা এবং অবান্তর প্রসঙ্গে তাহাদের সমালোচনা সমাচ্ছন্ন করিয়া ফেলেন; গ্রন্থের অন্তর্গত প্রকৃত সাহিত্যপদার্থকে প্রাধান্ত না দিয়া তাহার আনুষঙ্গিক নীতি অথবা অন্য কোন তত্ত্বকথার অবতারণা করিয়া পাঠকের চিত্তকে যথার্থ সাহিত্য পথ হইতে ভ্ৰষ্ট করেন। অন্ত হিসাবে তাহার গৌরব থাকিতে পারে কিন্তু সমালোচনার হিসাবে তাহার মূল্য নাই। তাহাতে পাঠকদের মনে রসবোধ বা নিৰ্ব্বাচনশক্তির চর্চা হয় না। সেইজন্য এখনকার সাহিত্যে বিস্তর স্বেচ্ছাচারিতা এবং ইতর ভাবের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে। এখনকার কোন রচনা কোন যথার্থ শ্রদ্ধেয় সমালোচকের হস্তে কোনরূপ প্রতিঘাত প্রাপ্ত হয় না—সক লেই স্বপ্রধান হইয়া উঠিয়াছেন এবং সাহিত্যক্ষেত্র জঙ্গলে সমাকীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। সাহিত্যের মধ্যে সংযমের, সৌন্দর্য্যের, শিষ্টতার এবং উচ্চ আদর্শের আবশু্যক কেহ স্মরণ করাইয়া দিতেছেন না, করিবার কেহই নাই, পত্রে এবং সংবাদপত্রে উৎসাহ অত্যন্ত মুক্তহস্তে বিতরিত হইয়া থাকে এবং রাজকোষের শূন্ত অবস্থায় কাগজের নোট যেরূপ অজস্র অথচ অনাদৃত হইয় উঠে এই সকল প্রাচুর্য্যবিশিষ্ট সমালোচনাও সাধারণের নিকট সেইরূপ প্রায় বিনা মূল্যে বিক্রীত হয়। - এই বৰ্ত্তমান দুরবস্থার উল্লেখ করিয়া কাহারও প্রতি দোষারোপ করা আমার অভিপ্রায় নহে। বিশেষতঃ এ দোষের অংশ যখন আমাদিগের সকলকেই বহন করিয়া লইতে হইবে তখন ইহার মধ্যে নিজের সাত্বনা বা শ্লাঘার কারণ কিছুই দেখি না। কিন্তু । এই অরাজকতার চিত্ৰ মনের মধ্যে অঙ্কিত করিয়া লইলে পাঠকগণ । }
পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/২৪৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।