পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

r৫৫২ সাধন । বুঝিতে পরিবেন, সাহিত্য-সিংহাসনে কে আমাদের রাজা ছিলেন এবং তাহার অভাবে সে শাসনভার গ্রহণ করিবার যোগ্য ব্যক্তি কেহই উপস্থিত নাই। ইহাও বুঝিতে পারিবেন বঙ্কিম যখন অামাদের সাহিত্যতরীর কর্ণধার হইয়াছিলেন তখন তরণী । কেন । এমন আশ্চর্য্য বেগে অগ্রসর হইয়াছিল, আর আজই বা “কেন সে যথেচ্ছ ভাসিয়া যাইতেছে এবং নানা বাতাসে ঘুরিয়া মরিতেছে। আমাদের কাহারও সে ক্ষমতা নাই, সে সাহস নাই, সে প্রতিভা নাই। আমরা যদি বা স্বস্ব শক্তি অনুসারে কেহ কেহ কোন কোন ৷ বিষয়ে ঔৎকর্ষ্য লাভ করিতে পারি, কিন্তু বৰ্ত্তমানের গতিকে নিয়মিত করা, সমস্ত সাহিত্যকে চালনা করা আমাদের সাধ্যায়ত্ত । নহে। বঙ্গদর্শন তখনকার সমস্ত বঙ্গসাহিত্যের মৰ্ম্মস্থলে শ্রীস্বরূপে বিরাজ করিতেছিল—এখন সে স্থান শূন্ত । সেই জন্য এখনকার । সাহিত্যের বিশেষ কোন আকার প্রকার দেখা যায় না ; তাহার আয়তন বৃদ্ধি হইতেছে কিন্তু তাহার রূপ নাই ; তাহার কোন লক্ষণ নাই, আদর্শ নাই, বিবেকশক্তি নাই, তাহার পক্ষে সকল পথই সমান। সংসারযুদ্ধে বঙ্গসাহিত্যের সারথী কৃষ্ণ যেন আজ তাহাকে পরিত্যাগ করিয়াছেন । - - - - সাহিত্যক্ষেত্রে কৃষ্ণের সহিত আমি আজ বঙ্কিমের তুলন। করিলাম। বঙ্কিমের মহাগ্রন্থ কৃষ্ণচরিত্র পাঠ করিলে লেখকের সহিত লেখকের আদর্শচরিত্রের সাদৃশ্য স্বতঃই মনে উদয় হয় । । সাহিত্যের মধ্যেও দুই শ্রেণীর যোগী দেখা যায়, ধ্যানযোগী এবং কৰ্ম্মযোগী। ধ্যানযোগী একান্তমনে বিরলে ভাবের চর্চা করেন, তাহার নিজেরই সহিত নিজের নিবিড় সম্বন্ধ। তাহার রচনাগুলি সংসারী লোকের পক্ষে যেন উপরি-পাওনা যেন যথা লাভের মত। আর সাহিত্যের কৰ্ম্মযোগী নিজের প্রতিভা নিজের ۴- ج ۲ ب.ب. বঙ্কিমচন্দ্র। ●○○ আনন্দ দ্বারা সংসারকে পূর্ণ করিতে চেষ্ট্র করেন। একজন স্থির সরোবরের মত, আর একজন চির-প্ররাহিত উৎসের দ্যায়। গভীরত হয়ত উভয়েরই সমান এবং উভয়েরই অপরিজ্ঞেয় অন্তরতলে ভাবের অক্ষয় আধার অাছে। কেবল একজনের ধ্যান এবং শান্তি, অপরের গতি এবং উৎসাহ । - বঙ্কিম সাহিত্যে কৰ্ম্মযোগী ছিলেন। তাহার প্রতিভা আপ নাতে আপনি স্থিরভাবে পর্য্যাপ্ত ছিল না । সাহিত্যের যেখানে যাহা কিছু অভাব ছিল সৰ্ব্বত্রই তিনি আপনার বিপুল বল এবং আনন্দ লইয়৷ ধাবমান হইতেন। ধৰ্ম্মতত্ত্ব যেখানে যখনই তাহাকে আবশ্যক হইত সেখানে তখনই } তিনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত হইয়া দেখা দিতেন। নবীন বঙ্গসাহিত্যের মধ্যে সকল বিষয়েই আদর্শ স্থাপন করিয়া যাওয়া তাহার উদ্দেশ্য ছিল। বিপন্ন বঙ্গভাষা আৰ্ত্তস্বরে যেখানেই তাহাকে আহবান করি কি কাব্য কি বিজ্ঞান কি ইতিহাস কি য়াছে সেখানেই তিনি প্রসন্ন চতুভূজ মূৰ্ত্তিতে দর্শন দিয়াছেন । । কিন্তু তিনি যে কেবল অভয় দিতেন সাত্বনা দিতেন অভাব পূর্ণ করিতেন তাহী নহে, তিনি দর্পহারীও ছিলেন ! এখন যাহারা বঙ্গসাহিত্যের সারথ্য স্বীকার করিতে চান তাহারা দিনে নিশীথে বঙ্গদেশকে অত্যুক্তিপূর্ণ স্তুতিবাক্যে নিয়ত প্রসন্ন রাখিতে চেষ্টা করেন কিন্তু বঙ্কিমের বাণী কেবল স্তুতিবাদিনী ছিল না, খড়গধারিণীও ছিল। বঙ্গদেশ যদি অসাড় প্রাণহীন ন হইত তবে কৃষ্ণচরিত্ৰে বৰ্ত্তমান পতিত হিন্দুসমাজ ও বিকৃত হিন্দুধৰ্ম্মের উপর যে অস্ত্রাঘাত আছে সে আঘাতে বেদনাবোধ এবং কথঞ্চিৎ চেতনা লাভ করিত। বঙ্কিমের দ্যায় তেজস্ব প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি ব্যতীত আর কেহই লোকাচার দেশাচারের বিরুদ্ধে এরূপ নিৰ্ভীক স্পষ্ট উচ্চারণে আপন মত প্রকাশ করিতে সাহস করিত না। এমন কি,