পাতা:সাহিত্যের স্বরূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যের স্বরূপ

অভিনয় করত ওই মহাকালের নাট্যমঞ্চের সঙ— আজ নেপথ্যে উঁকি মারলে তাকে আর চেনাই যায় না; এমন ফাঁকির জগতে সত্য যদি কাউকে বলা যায় তবে তার প্রতীক বাজার-দরের বাইরেকার আমরা ক’টিই, এই তলানি-তেলের শিশি, এই দাঁতভাঙা চিরুনি আর ক্ষয়ে-যাওয়া পাৎলা সাবানের টুকরো; আমরা রীয়ল, আমরা ঝাঁটানি-মালের ঝুড়ি থেকে আধুনিকতার রসদ জোগাই।আমাদের কথা ফুরোয় যেই, দেখা যায়, নটে গাছটি মুড়িয়েছে।’ কালের গোয়ালঘরের দরজা খোলা, তার গোরুতে দুধ দেয় না, কিন্তু নটে গাছটি মুড়িয়ে খায়। তাই আজ মানুষের সব আশাভরসা-ভালোবাসার মুড়োনো নটে গাছটার এত দাম বেড়ে গেছে কবিত্বের হাটে। গোরুটাও হাড়-বের-করা, শিঙভাঙা, কাকের-ঠোকর-খাওয়া-ক্ষতপৃষ্ঠ, গাড়োয়ানের মোচড় খেয়ে খেয়ে গ্রন্থিশিথিল-ল্যাজ-ওয়ালা হওয়া চাই। লেখকের অনবধানে এ যদি সুস্থ সন্দর হয় তা হলে মিডভিকটোরীয়-যুগবর্তী অপবাদে লাঞ্ছিত হয়ে আধুনিক সাহিত্যক্ষেত্রে তাড়া খেয়ে মরতে যাবে সমালোচকের কশাইখানায়।

বৈশাখ ১৩৪৪