পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৮৩

চেয়ে বেশী। এই সংস্কৃতের সংস্কৃতি ভেঙে দিয়ে নূতন ক’রে বাংলায় প্রাকৃত প্রভাব এবং সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিদেশী শব্দের নির্বিচার প্রয়োগ ফিরিয়ে আনার যাঁরা সমর্থন করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য যতই সাধু হোক, তাঁদের দ্বারা মাতৃভাষার কল্যাণ সাধিত হবে না।

 বাংলা দেশে যে সব বিদুষী এবং কবি বাংলা ভাষার সেবায় খ্যাতি লাভ করেছেন, তাঁদের কথা ব’লবার আগে ভারতের বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার মুসলমান যুগে যেসব লেখিকা দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা জনসাধারণের কাছে খ্যাতিলাভ করেছিলেন তাঁদের কথা কিছু কিছু বলা দরকার। প্রাদেশিক ভাষাগুলির মধ্যে দক্ষিণ দেশীয় তামিল তেলুগু প্রভৃতি ভাষায় বারো শ’ বছর আগেও ভালো ভালো কাব্য রচিত হয়েছে, সে-কথা পূর্বে বলেছি। তামিল সাহিত্যে আণ্ডাল এবং অভ্‌ভয়ার এবং তেলুগু সাহিত্যে মল্লা বা মল্লীর নাম সব চেয়ে বিখ্যাত।

 সংস্কৃতের সমবয়স্ক সুপ্রাচীন দ্রাবিড় ভাষাগুলির কথা বাদ দিলে, মোটের ওপর দেখা যায়, দ্বাদশ শতাব্দীর পর অর্থাৎ মধ্য যুগে ভারতের তত্ত্বালোচনার এবং রসসৃষ্টির কাজ সংস্কৃত ভাষার চিরপরিচিত খাত ছেড়ে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার খাত দিয়ে প্রবাহিত হ’তে আরম্ভ ক’রল। এই সময়ে পরাধীনতার আনুষঙ্গিক ফলস্বরূপ সমাজে এবং ধর্মে অনেক সঙ্কীর্ণতা, ক্ষুদ্রতা এবং মূঢ়তা প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল, যার প্রভাব আজও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। পৌরাণিক যুগে এবং বৌদ্ধ যুগে মানুষকে দেবতার উপরে স্থান দেবার যে চেষ্টা চলেছিল, তার পরিবর্তে স্বেচ্ছাচারী প্রণতপ্রতিপালক