পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

প্রবীণা পতিতার সংখ্যাই বেশী, কবির দল ক’রে গান গেয়ে এবং কবির লড়াইএর অনুকরণে সদ্যোরচিত কবিতায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ক’রে, জীবিকা উপার্জন করতেন। বিখ্যাত কবি দাশরথি রায়ের প্রণয়িনী অকাবাই এই রকম এক কবির দল খুলেছিলেন, তাঁর দলের জন্য ফরমাস মতো গান লিখতে গিয়েই দাশরথি রায় কবিতায় হাত পাকিয়েছিলেন এবং নীলকুঠির চাকরী ছেড়ে স্বাধীনভাবে পাঁচালীর দল খুলেছিলেন। এই যুগের যজ্ঞেশ্বরী নাম্নী এক কবির সখী-সংবাদ থেকে একটু উদাহরণ দিচ্ছি:

“এখন অধীনী বলিয়া ফিরে নাহি চাও,
ঘরের ধন ফেলে প্রাণ পরের ধন আগুলে বেড়াও।
নাহি চেন ঘর বাসা, কি বসন্ত কি বরষা,
সতীরে ক’রে নিরাশা অসতীর আশা পুরাও॥”

এইজাতীয়া কবিরা অনেক সময়েই শ্লীলতার গণ্ডী ছাড়িয়ে যেতেন, রাজধানী এবং বড় বড় সহরের বিকৃতরুচি শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করাই ছিল তাদের জীবিকার্জনের উপায়। কিন্তু ভাষার ও ছন্দের ওপর অসামান্য অধিকার না থাকলে ঐ রকম মুখে মুখে কবিতা রচনা করে প্রতিবাদ করা যায় না, সেদিক দিয়ে এঁদের প্রশংসা করতেই হবে। রজনী প্রভৃতি মেয়ে কীর্তনীদের দল এক সময় খুব সমাদর লাভ ক’রেছিল, এখন আর ততটা নেই।

 ১৮২৬ খৃষ্টাব্দে গোলোকমণি, দয়ামণি এবং রত্নমণি নাম্নী তিনজন ‘নেড়ি কবি’ অর্থাৎ বৈষ্ণবী কলকাতায় গাওনা ক’রতে এসে প্রসিদ্ধি লাভ ক’রেছিলেন। এই যুগে রাধাকান্ত দেবের লেখায় পণ্ডিতা শ্যামাসুন্দরী, হঠি বিদ্যালঙ্কার প্রভৃতি বিদুষীদের