পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১১৫

কথা এবং রেভারেণ্ড লং সাহেবের বাংলা বইয়ের তালিকায় ফরিদপুরের সুন্দরী দেবীর লেখা বাংলা বইয়ের কথা পাওয়া যায়। ভারতবর্ষের বিশেষতঃ বাংলাদেশের, সেই পরম অমঙ্গলময় রাষ্ট্রপরিবর্তনের তামসিক যুগে ‘মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে বিধবা হয়’, এ ধারণা পর্যন্তও মেয়েদের অনেকের মনে বদ্ধমূল হ’য়ে ছিল, সেই যুগেও সহর থেকে দূরে সুদূর পল্লীগ্রামের মেয়েরা সেই নিবিড় অন্ধকারে যে একেবারে ডুবে যাননি, পূর্বোক্তা বিদুষীরাই তার প্রমাণ। এই সব থেকে জানা যায় আমাদের প্রপিতামহীরা সকলেই অশিক্ষিতা ছিলেন না। সেদিন বাংলার গ্রামে গ্রামে যত চতুষ্পাঠী এবং পাঠশালা ছিল, আজ তার অধিকাংশই নেই, কথক ঠাকুর এবং পাঁচালী গায়কেরা কথকতা ক’রে পালা গান শুনিয়ে গ্রামে গ্রামে লোকেদের ধর্মনীতি কর্মনীতি, সদাচার এবং অনেক উচ্চ আদর্শের বার্তা শোনাতেন। যে শিক্ষা আজ আমরা পয়সা দিয়ে স্কুল, কলেজে গিয়ে পাই না, তেমন অনেক শিক্ষা আমাদের প্রপিতামহীরা বিনামূল্যে গ্রামে বসেই পেতেন। সত্যিকারের যে শিক্ষা নারী জীবনের, এমন কি; নর জীবনেও সর্বাঙ্গীণ পরিপূর্ণতা প্রদান করতে পারে, সেই ধর্মভৌমিক মহত্তম শিক্ষাই সে যুগের প্রত্যেক হিন্দুনারীর পাবার সুযোগ ছিল। হিসাব ক’রে দেখতে পারলে দেখানো যেত, অন্ততঃ ব্রাহ্মণ বৈদ্য কায়স্থের ঘরে আজকের চেয়ে ঢের বেশী মেয়ে সেদিন অশিক্ষিতা থাকতেন না, নিম্নতম শ্রেণীর নারীর মধ্যেও উচ্চতম আদর্শ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা পাঁচালি যাত্রার কৃপায় দৃঢ়তর হয়ে যেত। বিশেষ করে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্যের মেয়েদের অনেকের বাড়ীতে চতুষ্পাঠী থাকার সুযোগে এবং