পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১১৭

পরায়ণ শিক্ষিত ব্যক্তিরা ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগ পর্যন্ত বাংলা বই বা সংবাদপত্র প’ড়তে ভয় পেতেন।

 বাংলার শক্তিমতী লেখিকাদের আবির্ভাব আরম্ভ হ’ল প্রকৃতপক্ষে উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে। পাশ্চাত্য ভাবধারার যে প্রবল বন্যাস্রোত একদিন ভারতের জাতীয় সংস্কৃতিকে, বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায়কে ভাসিয়ে নিয়ে যাবার উপক্রম করেছিল, তার প্রথম আক্রমণের বিপদ-বিহ্বলতা দেশ তখন কাটিয়ে উঠেছে। পূর্ব ভারতে রাজা রামমোহন রায়-প্রবর্তিত এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ কর্তৃক পরিচালিত ব্রাহ্মসমাজ তাকে বাধা দিয়ে হীন করবার পর উত্তর ভারতে দয়ানন্দ প্রবর্তিত আর্য সমাজ এবং বাংলার ঋষিকল্প মনীষী ভূদেব কর্তৃক অনুপ্রাণিত বঙ্কিম, রমেশ, দীনবন্ধু, হেমচন্দ্র প্রভৃতি প্রতিভাশালী লেখকদল দ্বারা সেবিত নবজাগ্রত হিন্দুসমাজ দেশকে সেদিন স্বপ্রতিষ্ঠ করেছে। ভারত তার অতীতকে নূতন ক’রে ফিরে পেয়েছে, তার পরাধীনতার এবং বর্তমানের দৈন্যের লজ্জাকে ছাড়িয়ে উঠেছে তার অতীতের গর্ব, তার প্রাচীন ধর্মের এবং সাহিত্যের অসীম ঐশ্বর্যের স্মৃতি ও ভবিষ্যতের বিপুল সম্ভাবনা। ইংরেজী সাহিত্যের যা কিছু শ্রেষ্ঠ দান তাকে আমরা তখন গ্রহণ করতে শিখেছি নিজের দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। মুসলমান রাজত্বের শেষ যুগে যে সঙ্কীর্ণতা এবং পঙ্কিলতা সমাজে এসেছিল, তাকে অতিক্রম করতে অন্ততঃ অশ্রদ্ধা করতে শিখেছি। এই যুগ-সন্ধিক্ষণে পুরুষ লেখকদের মধ্যে যে কয়েক জন মহারথের আবির্ভাব হয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে সমান পদবাচ্য না হ’তে পারলেও নারী সাহিত্যিকারা তাঁদের সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থা ব্যবস্থার