পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৶৹

যেমন দু’চারজন করেছেন, তেমনি নারীর প্রশংসাও তার মধ্যে বর্ণনায় বহু পুরুষ ঋষি, কবি, বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন। নারীকে পুরুষই বড়ো করেছে, তার যোগ্যতার পরিচয় পেয়ে, পুরুষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে হিংসাবিদ্বেষ বাড়িয়ে নারী কোন দিন বড়ো হ’তে পারবে না, নিজের চরিত্রের মহত্ত্বে তাকে বড়ো হ’তে হবে, যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই তাকে স্বাধিকার লাভ করতে হবে। যে প্রকৃতপক্ষে যোগ্য, তাকে কোনো বিরুদ্ধ শক্তি কোনো দিন দাবিয়ে রাখতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।

 সাহিত্যের স্রষ্ট্রীরূপে একদল নারী যেমন খ্যাতি লাভ করেছেন, তেমনি সাহিত্যের সৃষ্ট চরিত্ররূপে আর এক দল নারী পৃথিবীর মানব মনের অমরাবতীতে সর্ব্বদেশের সর্ব্বমানবের আত্মীয়ারূপে সঙ্গিনীরূপে এবং আদর্শরূপে স্থানলাভ করেছেন। এঁদের কারো ঐতিহাসিক সত্তা ছিল, কারো ছিল না। সীতা, সাবিত্রী, দ্রৌপদী, দময়ন্তী সম্ভবতঃ একদিন জীবিত ছিলেন, কিন্তু রাধা, পদ্মিনী, আনাকারেনিনা, বিনোদিনী, নারায়ণী, কমলা, বাণী, চারু, সুরমা, সতী, বিন্দু, মনোরমা, দলনী, ভ্রমর, কুন্দ, উমা প্রভৃতি যে কোনোদিনই মানব দেহে বিরাজিতা ছিলেন না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই, তবু এঁদের অনেকে আমাদের বহু আত্মীয়ার চেয়েও পরমাত্মীয়া। আমাদের প্রপিতামহীর সম্বন্ধে শত বৎসর পূর্বের অনেক ঘটনাই আমরা জানি না, কিন্তু বহু সহস্রাব্দী পূর্বের সীতা, শৈবার জীবনের সমস্ত খুঁটিনাটি ঘটনা তাঁদের সমস্ত সুখ দুঃখের সঙ্গেই ব্যাস, বাল্মীকির কৃপায় আমরা পরিচিত। বর্ত্তমান যুগেও যে সব নারীচরিত্র সাহিত্যে মূর্তি পরিগ্রহ করছে সেগুলির মধ্যে কতকগুলি অন্ততঃ বহু শতাব্দী ধরে বহু মানব মানবীর আত্মীয়তা এবং সেই সঙ্গে অমরতা লাভ করবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সুতরাং এদের মধ্যে সাহিত্য স্রষ্ট্রীদের সঙ্গে এই সব কল্পলোক নিবাসিনী সাহিত্যে সৃষ্টিদের সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করাও অপ্রাসঙ্গিক হবে না। কাজের