“বহুদিন পরে বঁধুয়া এলে,
দেখা না হইত পরাণ গেলে,
এতেক সহিল অবলাবলে,
ফাটিয়া যাইত পাষাণ হ’লে।”
বলতে বলতেই মনে হ’ল এ বড় স্বার্থপরের মত কথা বলা হচ্ছে। অম্নি সামলে নিয়ে ক্ষীণ হাসিটুকু হেসে অথচ রাধামোহনের দৃষ্টি দিয়ে দেখলেই দেখতে পাওয়া যাবে,—দরশনে নয়নে নয়নে বহু লোর”, এবং ‘‘গদগদ কানু কন নিকসত বাত,” তা’ কোনরকম ক’রে কুশলবার্ত্তাটা নিলেন;—
“দুঃখিনীর দিন দুঃখেতে গেল, মথুরানগরে ছিলে ত ভাল?”
আবার বলছেন,—
“শুনহে পরাণ বঁধু!
কতদিন পরে পেয়েছি তোমারে, চাহিয়া রহিব শুধু।”
বৈষ্ণব সাহিত্যের রাধা সাহিত্যোদ্যানের অপূর্ব সৌরভে পরিপূর্ণ গৌরবোজ্জ্বল রাধা-পদ্ম,—বিশ্ব-প্রকৃতির, তথা বিশ্ব-নারীর প্রতীক। এ প্রেম যেমন মধুর তেমনই রহস্যময়। ভক্ত কবিগণ স্বয়ং রাধাভাবে বিভোর হ’তে পেরেছিলেন বলেই তাঁদের লেখনী হ’তে নিঃসৃত হ’তে পেরেছিল সেই সব অমিয় মধুর মহত্তর বাণী;—
“বঁধু, তুমি সে আমার প্রাণ
দেহমন আদি তোমারে সঁপেছি কুলশীল-জাতি মান।’’
এবং
“অনেক সাধের পরাণ বঁধুয়া নয়নে লুকায়ে থোব,
প্রেমচিন্তামণি রসেতে গাঁথিয়া হৃদয়ে তুলিয়া লব।”