পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
২৯৯

যথা, স্বদেশী ডাকাতি এবং খাঁটি দস্যুবৃত্তিতে যেমন প্রভেদ। তা’ সত্ত্বেও ভারতচন্দ্রের বহুমুখীন শক্তিকে তুচ্ছ করা যায় না। শিব বিবাহের বর দেখতে মেয়েদের হুড়াহুড়িতে কুমারসম্ভবের সপ্তম স্বর্গ মনে পড়িয়ে দেয়।

 আমাদের দেশের মেয়েদের মধ্যে অনেকেরই মনে মনে বিশ্বাস আছে এ দেশে মেয়েরা চির অনাদৃতা। এ অভিমান যে কি রকম ভিত্তিহীন মনু-বিধান থেকে প্রাচীন কবিদের রচনার মধ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধ প্রমাণই রয়েছে। নীতিকারেরা বাল্যে কৈশোরে যৌবনে বার্ধক্যে কোন অবস্থাতেই মেয়েদের খেটে খাবার বিধান দেন নি। “ধনরত্নসমন্বিতা বিদুষী কন্যাকে” “বিদ্বান বরে” সমর্পণ পিতা ও ভ্রাতার অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। আবার বাঙ্গালী কবিরা আগমনীর গানে গানে পতিগৃহবাসিনীদের কি করুণ সুরেই না আহ্বান জানিয়ে শারদাকাশ মুখরিত করে রেখেছেন! যদিও এ সব গান মাতৃহৃদয়েরই অভিব্যক্তি, কিন্তু রামপ্রসাদ, দাশরথী রায়, কমলাকান্ত, রাম বসু প্রভৃতি পুরুষেরাই ত এদের রচয়িতা। পিতৃহৃদয়ের কন্যাবাৎসল্য নারীচিত্তের স্বাভাবিক স্নেহদৌর্বল্যের মধ্য দিয়ে কল্পিত হয়ে অভিব্যক্ত হয়েছে মাত্র। কচি মেয়ের আদর আবদার থেকে প্রবাসী নন্দিনীর জন্য ভয় ভাবনা, অদর্শন জনিত দুঃখ পরিতাপ এবং দর্শনে বিপুল আনন্দোচ্ছ্বাস, পুনর্বিদায়ের বিচ্ছেদাতঙ্ক সমস্তটা জড়িয়ে নিয়ে আগমনী ও বিজয়ার চিত্রাবলী বঙ্গসাহিত্যের আর একটি অপরিমেয় মাধুর্যপূর্ণ অধ্যায়। রামপ্রসাদের গিরিরাণী আদরিনী কন্যার আবদারে অভিভূত হয়ে স্বামীর কাছে অনুযোগ করছেন;—